বাংলা সাহিত্যজগতে এক স্বাতন্ত্র্যধর্মী ও শক্তিমান লেখক ছিলেন সন্তোষকুমার ঘোষ ।তিনি ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নাগরিক জীবনের রূপকার। কিনু গোয়ালার গলি, শেষ নমস্কার সহ বহু কালজয়ী উপন্যাস ও গল্পের লেখক ছিলেন তিনি।
সন্তোষকুমার ঘোষ উনিশশো বিশ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নয় তারিখে অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ীতে ভুমিষ্ঠ হন।
তাঁর পিতার নাম সুরেশচন্দ্র ঘোষ এবং মাতার নাম সরযুবালা দেবী । এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক উনিশশো চল্লিশ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেন।
সাংবাদিক হিসাবে তিনি ছিলেন খুব সাহসী,পরিশ্রমী ও প্রায় কিংবদন্তি। আনন্দবাজার পত্রিকাতে বার্তা-সম্পাদক হিসাবে যোগদান করে বাংলা ভাষায় সংবাদ পরিবেশনে নতুনত্ব আনয়ন করেন এবং তিনি সংবাদপত্রে সর্বপ্রথম কথ্যভাষার প্রবর্তন করেন।
তিনি আনন্দবাজার পত্রিকাতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও পরিশ্রমী মানুষের জীবনযাপনের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে রচনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন এবং পরবর্তীকালে তিনি এই পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি অনেক সাংবাদিক গড়ে তুলেছিলেন। এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং তিনি কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যজীবনের সূচনা করেন।
এই প্রতিভাধর কথাসাহিত্যিক ছিলেন সুনিপুণ ভাষাশিল্পী ও রবীন্দ্রানুরাগী। এই অনুসরণীয় কথাসাহিত্যিকের রচিত প্রথম উপন্যাস ‘কিনু গোয়ালার গলি’ উনিশশো পঞ্চাশ সালে প্রকাশিত হয় এবং এই উপন্যাসটি দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলে বাংলার পাঠকসমাজে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
‘কিনু গোয়ালার গলি’ উপন্যাসটির কাহিনীবিন্যাস ও আখ্যানবর্ণনের কৌশল পাঠকগণের চোখকে আকৃষ্ট করে।
এই স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিকের রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস “নানা রঙের দিন” উনিশশো বায়ান্ন সালে প্রকাশিত হয় এবং এই উপন্যাসটি রচনার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন রচনা-রীতির প্রবর্তন করেন।
এই বিদ্বান কথাসাহিত্যিকের রচিত তৃতীয় উপন্যাস “মোমের পুতুল” উনিশশো তিপ্পান্ন সালে প্রকাশিত হলে তাঁর আখ্যানকৌশল আরো পরিনতি লাভ করে।
উপরোক্ত তিনটি উপন্যাস ছাড়াও এই প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিকের রচিত অন্যান্য উপন্যাসগুলি হলো- মুখের রেখা, জল দাও, স্বয়ং নায়ক, শেষ নমস্কার।
এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শেষ উপন্যাস ‘শেষ নমস্কার : শ্রী চরণেষু মাকে’ রচনা করে উনিশশো বাহাত্তর সালে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। অনেকের মতে এই উপন্যাসটি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা।
এই কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক ছোটগল্প রচনায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
উনিশশো পঁচাশি সালের আজকের এই দিনে ফেব্রুয়ারি মাসের ছাব্বিশ তারিখে বর্তমান ভারতবর্ষের কলকাতা শহরে এই মহামান্য কথাসাহিত্যিক কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল প্রশংসনীয় শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে গুণী এই লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
সাংবাদিক ও লেখক হিসাবে সমানভাবে সফল হওয়ার কারনে বাংলার পাঠকপ্রেমীগণের নিকটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সন্তোষকুমার ঘোষ।
তারিখ:- ২৬/০২/২০২১ ইংরেজি