বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।

তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

আঠারোশো একষট্টি সালের সাতই মে তিনি কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা! এবং শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত ‘আপা শ্রীলঙ্কা, নম নম নম নম মাতা, সুন্দর শ্রী বরনী’র মূল রচয়িতা ও সুরকারও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথের বায়ান্নটি কাব্যগ্রন্থ, আটত্রিশটি নাটক, তেরোটি উপন্যাস ও ছত্রিশটি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়।

তাঁর সর্বমোট পঁচানব্বইটি ছোটগল্প ও একহাজার নয়শো পনেরোটি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা বত্রিশ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলি নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এ ছাড়া তিনি প্রায় দু’ হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

উনিশশো তেরো সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।

আঠারোশো চুয়াত্তর সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তাঁর “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা।

আঠারোশো আটাত্তর সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথম বার ইংল্যান্ডে যান। আঠারোশো তিরাশি সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। আঠারোশো নব্বই সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন।

উনিশশো এক সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন। উনিশশো দুই সালে তাঁর পত্নী বিয়োগ হয়।
উনিশশো পাঁচ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তিনি জড়িয়ে পড়েন।

উনিশশো পনেরো সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু উনিশশো উনিশ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

উনিশশো একুশ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।উনিশশো তেইশ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘ জীবনে তিনি বহু বার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন।

উনিশশো একচল্লিশ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা।

রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।

সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানবসংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।

উনিশশো একচল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ সাত আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ৭/৮/২০২১ইং।

Facebook Comments