আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।
হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি,
পিতামাতা গুরুজনে সাদা মোরা ডরি।
আমাদের ছোটো গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
মাঠ ভরা ধান আর জল ভরা দিঘী,
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
আমগাছজাম গাছ বাঁশঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্নীয় হেন।
সকালে সোনার রবি পুব দিকে,
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফুটে।
[কবিতাঃ- আমাদের গ্রাম
কবিঃ- বন্দে আলী মিয়া]
বন্দে আলী মিঞা ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিত্রকর। তাঁর রচনায় বাংলার মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটেছে।
উনিশশো ছয় সালের পনেরোই ডিসেম্বর পাবনা জেলার রাধানগর গ্রামে তাঁর জন্ম।
তিনি পাবনার মজুমদার একাডেমী থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে চিত্রবিদ্যায় শিক্ষালাভ করেন।
কিছুদিন ইসলাম দর্শন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা ও রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে চাকরি করেন।
বন্দে আলী মিয়া কবিতা উপন্যাস, নাটক, জীবনী, শিশুসাহিত্য প্রভৃতি মাধ্যমে গ্রন্থ রচনা করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে কাব্য ময়নামতীর চর, অনুরাগ, পদ্মানদীর চর, মধুমতীর চর, ধরিত্রী;
উপন্যাস সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, শেষ লগ্ন, অরণ্য গোধূলি, নীড়ভ্রষ্ট প্রভৃতি।
গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে তাসের ঘর। রয়েছে নাটক মসনদ, শিশুসাহিত্যের মধ্যে রয়েছে চোর জামাই, মেঘকুমারী, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা, সোনার হরিণ, শিয়াল পন্ডিতের পাঠশালা, কুঁচবরণ কন্যা, সাত রাজ্যের গল্প।
এছাড়াও তার লেখা জীবনী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কামাল আতাতুর্ক, শরৎচন্দ্র, ছোটদের নজরুল ইত্যাদি।
বন্দে আলী মিয়া শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি পত্রপত্রিকায় চিত্রকর ও ব্লক কোম্পানির ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেন।
শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার এবং উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক লাভ করেন।
উনিশশো উনআশি সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ সাতাশে জুন রাজশাহীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ১৫/১২/২০২১ ইং।