একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ছিলেন নীলিমা সেন। উনিশশো আটাশ সালের আঠাশে এপ্রিল কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ছয় বছর বয়স তার পিতামাতা শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের শুরু। শান্তিনিকেতন থেকে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত ও রবীন্দ্রসংগীতে ডিপ্লোমা পাঠক্রম সম্পূর্ণ করেন। তারপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন।
শান্তিনিকেতনে তিনি মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার সংগীতগুরু ছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার।
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করার পরই তিনি ষোল বছর বয়সে প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেন। সেই রেকর্ডটি বেশ জনপ্রিয় হয়।
উনিশশো পঞ্চাশ সালে তিনি ড. অমিয়কুমার সেনকে বিবাহ করে শান্তিনিকেতনের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। তাদের কন্যা নীলাঞ্জনাও একজন সংগীতশিল্পী।
নীলিমা সেন তার স্বামীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিবিসির বিভিন্ন কেন্দ্রে গান গেয়েছিলেন। প্রসাদ সেনের সঙ্গে তিনি ‘সুরঙ্গমা’ নামে একটি সংগীত বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
কয়েক বছরের জন্য তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও গান শেখান। তিনি সংগীত ভবনের অধ্যক্ষা হয়েছিলেন এবং সেই পদে থাকাকালীনই অবসর নেন। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি তিনি তাসের দেশ, মায়ার খেলা, শেষরক্ষা নৃত্যনাট্যগুলিতে অংশ নেন।
তার গলার স্বাভাবিক করুণ স্বরে ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার, আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, বজাও রে মোহনবাঁশি, তবু মনে রেখো গানগুলি বিখ্যাত হয়।
নীলিমা সেন সারা ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মায়ানমার ও মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠান করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, লিলি ইসলাম, বাসবী দত্ত, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, রীতা ঘোষ, প্রমিতা মল্লিক, জয়ন্তী পুরকায়স্থ, সোমা রায়, অদিতি মহসিন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
তিনি একাধিক রেকর্ড প্রকাশ করেন। দুইহাজার চার সালে সারেগামা থেকে নীলিমা সেনের চারটি একক কমপ্যাক্ট ডিস্ক প্রকাশিত হয় খেলার সাথি, বিদায়দ্বার, রাজা, তোমারি মধুর রূপে ভরেছ ভুবন ও তুমি বন্ধু, তুমি নাথ। তার পরের বছর সারেগামা থেকে একুশটি গানের আরেকটি কমপ্যাক্ট ডিস্ক কী রাগিণী বাজালে প্রকাশিত হয়।
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আঠাশে জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ২৮/৬/২০২১ ইং