বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্ এর জন্মবার্ষিকী আজ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।

                [কবিতাঃ- বাতাসে লাশের গন্ধ] (কবিঃ- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)

‘প্রতিবাদী রোমান্টিক’ হিসাবে খ্যাত ছিলেন বিশিষ্ট বাংলাদেশি কবি ও গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে ক’জন কবি বাংলাদেশি শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাঁদের অন্যতম।

উনিশশো ছাপান্ন সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ ষোলই অক্টোবর রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে উনিশশো আশি সালে বিএ সম্মান এবং উনিশশো তিরাশি সালে এমএ ডিগ্রি লাভ।

তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক।

উনিশশো পঁচাত্তর সালের পরের সবক’টি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠ ভাবে উপস্থিত। এ ছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত।

কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে ক’জন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।

তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ চৌত্রিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।

উনিশশো একাশি সালের উনত্রিশে জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। তবে উনিশশো অষ্টাশি সালে তাঁদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।

তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে উপদ্রুত উপকূল, ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, ছোবল, গল্প, দিয়েছিলে সকল আকাশ, মৌলিক মুখোশ, ছোটগল্প, সোনালি শিশির, নাট্যকাব্য, বিষ বিরিক্ষের বীজ প্রভৃতি।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ উনিশশো আশি সালে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ অর্জন করেন।

উনিশশো একানব্বই সালের একুশে জুন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৬/১০/২০২১ ইং।

Facebook Comments