বলিউডে তিনি পরিচিত ছিলেন ট্র্যাজেডি কিং নামে। পঁয়ষট্টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ছয় দশকের অভিনয় জীবন তার।
বলছি হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় সেই দিলীপ কুমারের কথা।
তিনি একজন ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক পুরস্কার বিজয়ী হওয়ার জন্য গিনেস বিশ্ব রেকর্ড ঝুলিতে নিজের জায়গা দখল করে নেন।
তিনি তার অভিনয় জীবন জুড়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন আট বার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার সহ উনিশবার ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন পেয়েছেন।
তিনি উনিশশো তিরানব্বই সাল থেকে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত হন এবং পঁচিশ জানুয়ারি দুইহাজার পনেরো সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ দেওয়ার ঘোষণা করে।
পাকিস্তানের খাইবারে মুহাম্মদ ইউসুফ খান নাম নিয়ে দিলীপ কুমার এগারোই ডিসেম্বর উনিশশো বাইশ সালে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লালা গোলাম সারওয়ার একজন ফলের ব্যবসায়ী ছিলেন। মায়ের নাম আয়েশা বেগম।
দিলীপ কুমার নাসিকের কাছাকাছি মর্যাদাপূর্ণ দেওলিয়ার বার্নস স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। উনিশশো ত্রিশ সালে শেষ সময়ে বারো সদস্যর পরিবার নিয়ে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান।
উনিশশো চুয়াল্লিশ সালের “জোয়ার ভাটা” চলচ্চিত্রটির জন্য দিলীপকে প্রধান চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউড শিল্পে প্রবেশ করেন।
উনিশশো সাতচল্লিশ সালে “নুর জাহানের” বিপরীতে “জঙ্গু” বক্স অফিসে তার প্রথম ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রসহ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন।
এছাড়া নায়া দওর, মুঘল-ই-আজম, দেবদাস, রাম অউর শ্যাম, আন্দাজ, মধুমতী এবং গঙ্গা-যমুনারর মতো ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। উনিশশো আটানব্বই সালে শেষবার সিনেমায় অভিনয় করেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা।
তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য জোগান, দীদার, দাগ, দেবদাস, ইহুদী, মধুমতি প্রভৃতি। তিনি মেহবুব খানের “অমর” ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি “দাগ” চলচ্চিত্রটির জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেওয়া প্রথম অভিনেতা ছিলেন এবং দেবদাস চলচ্চিত্রটির জন্য আবারও পুরস্কার প্রাপ্তির সামনে হাজির হন।
তিনি নার্গিস, কামিনী কুশল, মিনা কুমারী, মধুবালা এবং বৈজয়ন্তীমালা-সহ সময়ের শীর্ষ অনেক জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন।
উনিশশো ছেষট্টি সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দিলীপ কুমার। গোপী, সাগিনা ছবিতে জুটিতে কাজ করেছেন তাঁরা।
ভারত সরকারের তরফে উনিশশো একানব্বই সালে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয় দিলীপ কুমারকে। ভারতীয় সিনেমায় অসামান্য অবদানের জন্য উনিশশো চুরানব্বই সালে ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান দিলীপ কুমার।
দুইহাজার থেকে দুইহাজার ছয় সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন তিনি। এমনকি উনিশশো আটানব্বই সালে দিলীপ কুমারকে নিশান-ই-ইমতিয়াজ সম্মানে সম্মানিত করে পাকিস্তান সরকার।
আজ অর্থাৎ দুইহাজার একুশ সালের সাতই জুলাই গুণী এই অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেছেন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।
তাংঃ- ৭/৭/২০২১ ইং