আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকবি হচ্ছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। আঠারোশো চব্বিশ সালের পঁচিশে জানুয়ারি যশোহর জেলায় কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির বিশিষ্ট জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি।
ঊনবিংশ শতকে জন্ম নেওয়া এই কবি বাংলা কাব্য ধারায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে যুগান্তরকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছেন যা তাকে চির অমরত্বের খ্যাতি দান করেছে ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।তার পিতা সেকালের রীতি অনুযায়ী ফার্সি ভাষায় দক্ষ ছিলেন | এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
জীবনের নানা নাটকীয়তার মধ্যে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ভার্সাই নগরে সপরিবারে থাকতে শুরু করেছিলাম| এই সময় তাঁর তীব্র অর্থাভাব দেখা দেয় এবং ঋণের দায়ে জেলে যাবার উপক্রম হলে, তাঁর লেখা পত্র পেয়েই দয়ার সাগর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে এবং পরে আরও টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে, কবিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন | ভার্সাইতে থাকাকালীন ইতালীয় ভাষার সনেট বাংলায় প্রবর্তনের চেষ্টা করেন, যার ফল তাঁর চতুর্দশপদী কবিতাবলী |
মাইকেলের জীবন নাটকীয় ঘটনায় ভরা | তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের যোগসূত্র সৃষ্টিতে সফল | তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রথম সম্মিলন ঘটিয়েছেন | বলা হয় যে বাংলা কাব্য যেন ছিল নারীধর্মাশ্রিত, মধুসূদন তাকে দান করেছেন গুরুগাম্ভীর্য এবং পৌরুষ | বাংলা সাহিত্যের গতানুগতিকতার ধারা কে তিনি স্বাধীন চিন্তার পথে প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন |
জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মূলত মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক।
তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক),বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি।
মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয়ই ছিলো তাই নয় বরং তা ছিলো বেদনাঘনও বটে। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিনি দিন পরেই কবি পরলোক গমন করেন কলকাতা জেনারেল হাসপাতালে। তাঁকে কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড ক্রিশ্চিয়ান সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়। তাঁর বিখ্যাত সমাধি-লিপি তিনি নিজেই লিখে গিয়েছিলেন।মাত্র উনপঞ্চাশ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।।
আজ উনত্রিশে জুন অাধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী। আঠারোশো তিয়াত্তর সালের আজকের এই দিনটিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল স্তরের সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
তাংঃ- ২৯/৬/২০২১ ইং।