নাট্যকার ও অভিনেতা তুলসী লাহিড়ীর জন্মবার্ষিকী আজ

তুলসী লাহিড়ী বাংলা নাট্য ও অভিনয় জগতের এক চিরস্মরণীয় নাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দূর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের রূঢ় অভিঘাত ও সর্বোপরি মূল্যবোধে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস শিল্পমানসকে প্রভাবিত করেছিল।

নাট্যকার ও অভিনেতা তুলসী লাহিড়ী জন্মগ্রহণ করেছিলেন আঠারোশো সাতানব্বই সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ সাতই এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার নলডাঙ্গা গ্রামে এক জমিদার পরিবারে।

এ সময় তাঁর রচিত দুটি গান জমিরুদ্দিন খাঁ রেকর্ড করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। এর ফলে হিজ মাস্টার্স ভয়েস ও মেগাফোন গ্রামোফোন কোম্পানিতে সংগীত পরিচালকের পদ লাভ করেন তুলসী লাহিড়ী।

পরে আইন ব্যবসা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনয় শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি মঞ্চাভিনেতা চিত্রাভিনেতা নাট্যকার ও চিত্র পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

তুলসী লাহিড়ী যখন চিত্রজগতে প্রবেশ করেন, তখন ছিল চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ। ক্রমে সবাক যুগের প্রচলন হয় এবং তিনি পঞ্চাশটিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন।

পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রামবাংলার দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তাদের ওপর ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে তিনি দুঃখীর ইমাম ও ছেঁড়া তার নাটক রচনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।

এ নাটক দুটি তখন বাস্তব জীবনভিত্তিক নাট্যচর্চার গোড়াপত্তনে সহায়তা করে। তাঁর অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে মায়ের দাবি, পথিক, লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার, মণিকাঞ্চন, মায়া-কাজল, চোরাবালি, সর্বহারা প্রভৃতি।

ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে মার্কসবাদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি নাটকগুলো রচনা করেন। তিনি একটি অর্কেস্ট্রা দলও গঠন করেছিলেন, যা ওই সময় খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে। সহস্রাধিক গানের গীতিকার হলেও তুলসী লাহিড়ীর কোনো গীতি সংকলন নেই।

সঙ্গীতের মাধ্যমে তাঁর নাট্যজগতে প্রবেশ। যেখানেই তিনি বিশেষ কোনো আদর্শের কথা বলেছেন সেখানেই রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতার উদ্ধৃতি যেন তাঁর নাটকের আবশ্যিক অঙ্গ হয়ে গেছে। নাট্যকার রূপে তিনি প্রগতিশীল নাট্যধারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তিনি নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিলেন।

তিনি ছেঁড়া তার নাটক ছাড়াও ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে রচনা করেন দুঃখীর ইমাম নামের একটি নাটক।

বাংলার উত্তরের কৃষক সমাজের বাস্তব জীবনচিত্র এসব নাটকের উপজীব্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে নাটক রচনায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে মার্ক্সবাদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি নাটকগুলো রচনা করেন।

উনিশশো একচল্লিশ সালে দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায় মায়ের দাবি নাটকটি বাণিজ্যিক মঞ্চে নিয়ে আসেন। উনিশশো ছেচল্লিশ সালে শিশির ভাদুড়ি দুঃখের ইমাম নাটকটি মঞ্চে নিয়ে আসেন।

উনিশশো উনপঞ্চাশ সালে বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী পথিক নাটকটি প্রযোজনা করেছেন। উনিশশো পঞ্চাশ সালে শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় ছেঁড়া তার প্রদর্শিত হয়।

তুলসী লাহিড়ী রচিত নাটকগুলো বাস্তব জীবনভিত্তিক নাট্যচর্চার গোড়াপত্তনে সহায়তা করেছিল৷ নাট্যকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি সর্বজন বিদিত।

তিনি উনিশশো উনষাট সালের বাইশে জুন মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখ:- ০৭/০৪/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments