বাংলা চলচ্চিত্র এবং নাটকে খুুবই জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ছিলেন আবুল খায়ের। তাঁর প্রকৃত নাম এ কে এম মহিবুর রহমান।
উনিশশো উনত্রিশ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ চৌঠা এপ্রিল তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশে তিনি সর্বপ্রথম অভিনয় করেন যা উনিশশো ছাপান্ন সালের তেসরা আগস্ট মুক্তি পেয়েছিলো।
অভিনয়ে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আবুল খায়ের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় করে গেছেন দাপটের সাথে।
বিশেষকরে টেলিভিশন নাটকে তাঁর বৈচিত্রময় অভিনয়শৈলী দারুনভাবে দাগ কেটেছে দর্শক-শ্রোতাদের মনে।
বিটিভির একটা জনসচেতনতামূলক নাটকের দৃশ্য- তিনি অর্জুন গাছ খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর বলছেন “তাইলে আমি ওষুদ বানামু কি দিয়া, মানুষ বাঁচবো ক্যামনে, গাছ অইল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি আল্লাহর দেয়া দান, আমগো জীবন”। এই সংলাপটা সেসময়ে বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। যা আজও স্মৃতিতে অম্লাণ হয়ে আছে শুধু তাঁর অভিনয় নৈপূণ্যের জন্য।
আবুল খায়ের অভিনীত টেলিভিশন নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, নিমফুল, আজ রবিবার, পিতৃত্ব, দ্বিতীয় জন্ম, অয়োময়, প্রিয় পদরেখা ইতিকথা, হিমু, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, নক্ষেত্রের রাত প্রভৃতি।
জনপ্রিয় এই অভিনেতা যেসব ছবিতে অভিনয় করেন সেগুলোরমধ্যে তিতাস একটি নদীর নাম,জন্ম থেকে জ্বলছি, লাল সবুজের পালা, দহন, ন্যায় অন্যায়, জিনের বাদশা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, ভাবীর সংসার, দুখাই, নদীর নাম মধুমতি, পদ্মা নদীর মাঝি, দীপু নাম্বার টু, চাকা, একাত্তরের যীশু, অবুঝ সন্তান, অন্য জীবন, শ্রাবণ মেঘের দিন, ইতিহাস কন্যা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অভিনয়ে সুনিপূণ দক্ষতার অধিকারী, সফল অভিনেতা আবুল খায়ের চার চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।যে চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী হন সেগুলো হলো দহন, রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত, অন্য জীবন ও দুখাই।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তিনি কানাডার চলচ্চিত্র বোর্ডে যোগ দিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালক এবং এফডিসির ব্যবস্হাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।
উনিশশো একাত্তর সালের সাতই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ অডিও-ভিডিও ধারণ এবং প্রচারের সাথে যারা জড়িত ছিলেন অভিনেতা আবুল খায়ের তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। একজনকে পছন্দ করতেন, তাঁকে বিয়ে করতে পারেননি বলে থেকে গেছেন অকৃতদার হিসেবে। ‘আজ রবিবার’ নাটকে দাদার চরিত্রে অভিনয় করেও তিনি সবার মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন।
তিনি দুইহাজার এক খ্রিষ্টাব্দের দোসরা ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল বাহাত্তর বছর।
ইতিহাসের কৃতিমান ব্যক্তিত্ব অভিনেতা-নির্মাতা আবুল খায়ের চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে।
আজ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখ:- ০৪/০৪/২০২১ ইংরেজি