বিশিষ্ট ছোট গল্পকার এবং কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জন্মবার্ষিকী আজ

হাসান আজিজুল হক ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ছোট গল্পকার এবং কথাসাহিত্যিক। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তাঁর সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ।

জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তাঁর অনেক গল্পের পটভূমি।

তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন উনিশশো সত্তর খ্রিস্টাব্দে। উনিশশো নিরানব্বই খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

এ ছাড়া দুইহাজার বারো খ্রিস্টাব্দে তিনি অসম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।

হাসান আজিজুল হক উনিশশো উনচল্লিশ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ দোসরা ফেব্রুয়ারি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।

উনিশশো আটান্ন খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজে থেকে দর্শনশাস্ত্রে‌‌ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। উনিশশো ষাট খ্রিস্টাব্দে একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

উনিশশো ষাট থেকে উনিশশো তিয়াত্তর পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।

উনিশশো তিয়াত্তর খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইহাজার চার সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে একত্রিশ বছর অধ্যাপনা করেন।

রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র ‘চারপাতা’য় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়। লেখাটির বিষয় ছিল রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য।

খুলনায় এসে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির উৎসমুখ খুলে গেল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’-কে কেন্দ্র করে। ষাটের দশকের প্রথম দিকে নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশিদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েক জন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল ‘সন্দীপন গোষ্ঠী’।

তত দিনে অবশ্য হাসান আজিজুল হক রীতিমতো বিখ্যাত। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’এর প্রথম গল্প ‘শকুন’ এ সুদখোর মহাজন তথা গ্রামের সমাজের তলদেশ উন্মোচিত করেছিলেন তিনি।

প্রায় অর্ধশতাব্দীর গল্পচর্চায় বিষয়, চরিত্র ও নির্মাণকুশলতায় উল্লেখ করার মতো গল্প হাসান আজিজুল হকের অনেক।

এ সবের মধ্যে রয়েছে শকুন, তৃষ্ণা, উত্তরবসন্তে, বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর, পরবাসী, আমৃত্যু আজীবন, জীবন ঘষে আগুন, খাঁচা, ভূষণের একদিন, ফেরা, মন তার শঙ্খিনী, মাটির তলার মাটি, শোণিত সেতু, ঘরগেরস্থি, সরল হিংসা, খনন, সমুখে শান্তির পারাবার, অচিন পাখি, মা-মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা, সারা দুপুর, কেউ আসেনি।

‘আগুনপাখি’ নামে একটি উপন্যাস যা প্রকাশিত হয় দুইহাজার ছয় সালে। উপন্যাসটি বর্ষসেরা উপন্যাসের স্বীকৃতি লাভ করে।

দুইহাজার একুশ সালের পনেরোই নভেম্বর হাসান আজিজুল হক মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।

তারিখঃ- ২/২/২০২১ইং।

Facebook Comments