বিনয় ঘোষের ছদ্মনাম ছিল ‘কালপেঁচা’। তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমাজতাত্ত্বিক, লেখক, সাহিত্যসমালোচক, বাংলা ভাষা ও লোকসংস্কৃতির গবেষক।
উনিশশো সতেরো সালের চৌদ্দই জুন কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈতৃক নিবাস ছিল যশোরে।
বিনয় ঘোষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও নৃতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড, যুগান্তর, দৈনিক বসুমতী ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
বিনয় ঘোষ ইতিহাস ও রাজনীতিবিষয়ক পর্যালোচনায় বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি মার্কসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তাঁর রচনায় মার্কসীয় জীবনদর্শনের অনুশীলন লক্ষ করা যায়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সোভিয়েট সভ্যতা, ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ, সোভিয়েট সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি তাঁর রাজনীতিবিষয়ক গ্রন্থ।
ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে বিনয় ঘোষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এখানে তাঁর ল্যাবরেটরী নাটকটি অভিনীত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ ও ক্ষেত্রসমীক্ষা ভিত্তিক আলোচনাগ্রন্থ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি তাঁর বিশিষ্ট রচনা।
গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ, মেট্রোপলিটন মন, বাংলার নবজাগৃতি, বিদ্যাসাগর ও বাঙালীসমাজ, বিদ্রোহী ডিরোজিও, সুতানুটি সমাচার, বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা, মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ, বাংলার বিদ্বৎ সমাজ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত, বাংলার লোকসংস্কৃতি ও সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি তাঁর অন্যান্য প্রধান রচনা। মার্কসবাদের আলোকে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ এসব গ্রন্থের প্রধান আকর্ষণ।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে টাউন কলিকাতার কড়চা, সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র, জনসভার সাহিত্য, কালপেঁচার নকসা, নববাবুচরিত, ডাস্টবিন (গল্প-সংকলন) ইত্যাদি।
৩০৪ নামে একটি উপন্যাসও তিনি রচনা করেন।
বিনয় ঘোষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিদ্যাসাগর বক্তৃতা’র প্রথম বক্তা ছিলেন। উনিশশো আটান্ন থেকে ষাট সাল পর্যন্ত তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রকফেলার রিসার্চ স্কলার হিসেবে গবেষণারত ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি গ্রন্থের জন্য তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
উনিশশো আশি সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ পঁচিশে জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২৫/৭/২০২১ ইং।