বাংলা ভাষার অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি হচ্ছেন কায়কোবাদ যাকে মহাকবিও বলা হয়। তার প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা
মীর মশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদই হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি। কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তাঁর মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য একথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায় যে কবি কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি।
কায়কোবাদ আঠারোশো সাতান্ন সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি তৎকালীন ঢাকা মাদ্রাসাতে [বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ] ভর্তি হন যেখানে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন।
তিনি পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে তার স্থানীয় গ্রামে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন।
উনিশশো বত্রিশ সালে, তিনি কলকাতাতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের রয়েছে বিরহ বিলাপ, কুসুম কানন, অশ্রুমালা, মহাশ্মশান।
এই মহাশ্মশান তার রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য।
এছাড়াও রয়েছে শিব-মন্দির বা জীবন্ত সমাধি,
অমিয় ধারা, শ্মশানভষ্ম, মহররম শরীফ।
এই মহররম শরীফ কবির মহাকাব্যোচিত বিপুল আয়তনের একটি কাহিনী কাব্য।
এছাড়াও শ্মশান ভসন, প্রেমের বাণী, প্রেম পারিজাত প্রভৃতি তার অনন্য সৃষ্টি।
মুসলমান কবি রচিত জাতীয় আখ্যান কাব্যগুলোর মধ্যে সুপরিচিত মহাকবি কায়কোবাদ রচিত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যটি। কায়কোবাদের মহাকবি নামের খ্যাতি এই মহাশ্মশান কাব্যের জন্যই। কাব্যটি তিন খন্ডে বিভক্ত।
মোট ষাট সর্গে প্রায় নয়শ পৃষ্ঠার এই কাব্য বাংলা তেরোশো একত্রিশ বা ইংরেজি উনিশশো চার সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। যদিও তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ হতে আরো ক’বছর দেরি হয়েছিল।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধযজ্ঞকে রূপায়িত করতে গিয়ে কবি বিশাল কাহিনী,ভয়াবহ সংঘর্ষ, গগনস্পর্শী দম্ভ,এবং মর্মভেদী বেদনাকে নানাভাবে চিত্রিত করেছেন। বিশালতার যে মহিমা রয়েছে তাকেই রূপ দিতে চেয়েছিলেন এই কাব্যে।
বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনী নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে।
সেই গৌরবের প্রকাশে উনিশশো বত্রিশ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কবি কায়কোবাদ।
তিনি আধুনিক বাংলাসাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি। বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য উনিশশো পঁচিশ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেন।
উনিশশো একান্ন সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ একুশে জুলাই মহাকবি কায়কোবাদ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২১/৭/২০২১ইং।