সনৎ সিংহ ছিলেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের এক যশস্বী শিল্পী। ছোটদের জন্য ছড়ার গানের জগতে জপমালা ঘোষ, অমল মুখোপাধ্যায় আর সনৎ সিংহ ছিলেন তিন নক্ষত্র। সুর-তাল-লয়ের ছন্দে নিজস্ব গায়কিতে সনৎ সিংহ যেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, ছোটদের ছড়ার গানে বাংলা সঙ্গীতের মহান ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
সনৎ সিংহ বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বালিতে উনিশশো উনত্রিশ সালের বিশে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি দূরদর্শন ও আকাশবাণী কলকাতা’র নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সহস্রাধিক জনপ্রিয় গান।
কালজয়ী যে গানগুলি আজো বাঙালি শ্রোতাদের মোহিত করে সেগুলি হল, বাবুরাম সাপুড়ে,সরস্বতী বিদ্যেবতী,রথের মেলা রথের মেলা,ঠিক দুক্কুরবেলা ভূতে মারে ঢিল, এক এক্কে এক,অহল্যা কন্যার ঘুম ঘুম কি,আশ্বিনেতে মেঠো হাওয়ায়, কাল নাগিনী,কে আমারে বলতে পারে রংমশালের,টাকডুম টাকডুম ডুমাডুম ইত্যাদি আরও অনেক।
সাড়ে চুয়াত্তর,হংস মিথুন বাংলা ছায়াছবিতে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।উনিশশো তিপান্ন খ্রিস্টাব্দের মুক্তিপ্রাপ্ত সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে অভিনয়ে অংশও নিয়েছিলেন।
শ্যামা সঙ্গীত ভক্তিগীতিতেও পারদর্শী ছিলেন। এছাড়া বিচিত্র সুর ও ছন্দে বেতারের রম্যগীতিতেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
পরবর্তী কালে তাঁর জনপ্রিয় অনেক গান রিমেক করে বহু শিল্পী বাহবা কুড়িয়েছেন। বাংলা ব্যান্ডও সনৎ সিংহের কালজয়ী গানগুলিকে ব্যবহার করেছে।
সনৎ সিংহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং দুইহাজার তেরো খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীত মহাসম্মান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তাঁর মৃত্যুর পর এই পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর পুত্রকে প্রদান করে।
বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী সনৎ সিংহ সাধারণ জীবন যাপন করতেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি আজীবন বালির দেওয়ানগাজি রোডে বসবাস করেছেন। বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন বহুদিন।
দুইহাজার তেরো খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের প্রথমে অসুস্থ হলে তাঁকে আটই মার্চ বেলুড়ের নিকটস্থ বালি শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে সেই বছরের আজকের এই দিনে অর্থাৎ একত্রিশে মার্চ সকাল সোয়া দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকী জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখ:- ৩১/০৩/২০২১ ইংরেজি