কাকন দেবী ছিলেন একজন জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী এবং পাশাপাশি একজন কণ্ঠশিল্পী।
উনিশো ষোল সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বাইশে এপ্রিল হাওড়ার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। তিনি সাধারণের কাছে কাননবালা নামে পরিচিত ছিলেন। নয় বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যায়।
অসহায় মাতা দুই কন্যাকে নিয়ে এক দূর সম্পর্কের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মা-মেয়েতে মিলে ঝিয়ের কাজ করেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘সবারে আমি নমি’ গ্রন্থে তাঁর বড় হয়ে ওঠার এসব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
কানন দেবী অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। উনিশশো ছাব্বিশ সালে তিনি একদিন কলকাতার ম্যাডান চলচ্চিত্র স্টুডিওতে হাজির হন।
সৌন্দর্যের জন্য তাঁর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান এবং প্রথম চলচ্চিত্র জয়দেবে অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ টাকা উপার্জন করেন।পরের বছর অভিনয় করেন অপর একটি ছবিতে।
তবে তাঁর পুরোমাত্রার অভিনয়জীবন শুরু হয় উনিশশো ত্রিশ সালে। তাঁর প্রথম সবাকচিত্র জোর বরাত। উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালে মানময়ী গার্লস স্কুলে নায়িকার অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন।
এ সময়ে তিনি কাননবালা থেকে কানন দেবীতে পরিণত হন। অপরূপা কানন এতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন যে, রাস্তার ধারে তাঁর আলোকচিত্র বিক্রি হতে শুরু করে এবং তাঁর পোশাক অলঙ্কার চলাফেরা ইত্যাদি নারীদের জন্যে ফ্যাশনে পরিণত হয়।
পরে সেকালের প্রখ্যাত নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে মুক্তি এবং আরও কয়েকটি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সীপ্রশংসা লাভ করেন।
তাঁর জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যাপতি সাথী পরিচয় শেষ উত্তর এবং মেজদিদি।
উনিশশো আটচল্লিশ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেন এবং উনিশশো চৌষট্টি সাল পর্যন্ত বিশেষত মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
অভিনয় ছাড়া তিন দশক ব্যাপী তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন।
বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত নজরুলগীতি এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় এবং নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া সেকালের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার রাইচাঁদ বড়াল ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় ওস্তাদ আল্লারাখা পঙ্কজ মল্লিক অনাদিকুমার দস্তিদার ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র প্রমুখের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছিলেন।
কানন দেবীর বিয়ে হয় ভিক্টোরীয় শুচিতার প্রতীক হেরম্ব মৈত্রের পুত্রের সঙ্গে। অভিনয়জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি সমাজ কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন।
অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নায়িকা এবং দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন।
ছিয়াত্তর বছর বয়সে উনিশশো বিরানব্বই সালের সতেরোই জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ২২/০৪/২০২১ইং