জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, সংস্কৃতি ও সমাজকর্মী। উনিশশো তেইশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ নয় ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী মেহের কবীরও ছিলেন একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী।
পিতার তত্ত্বাবধানে কবীর চৌধুরীর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় স্বগৃহে। তিনি উনিশশো আটত্রিশ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং উনিশশো চল্লিশ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ ও বৃত্তি লাভ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ (সম্মান) ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
কবীর চৌধুরী উনিশশো সাতান্ন আটান্ন সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকান সাহিত্য বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি উনিশশো পঁয়ষট্টি সালে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
উনিশশো চুয়াল্লিশ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভের পর কবীর চৌধুরী পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন।
উনিশশো পঞ্চান্ন সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে তিনি কিছুকাল ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে পর পর অধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন।
কিছুকাল তিনি শিক্ষা বিভাগীয় ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমীর ডিরেক্টর এবং পরে ডিরেক্টর জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন।
উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কবীর চৌধুরী ন্যাশনাল এডুকেশন কাউন্সিলের প্রথম সদস্য সচিব পদে যোগ দেন। উনিশশো তিয়াত্তর সালে তাঁকে শিক্ষা ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
উনিশশো চুয়াত্তর সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। উনিশশো তিরাশি সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকালে তিনি নাট্যকলা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও পাঠদান করতেন।
কবীর চৌধুরীকে উনিশশো আটানব্বই সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।
কবীর চৌধুরীর সাহিত্যকর্ম বহুমুখী, বস্ত্তনিষ্ঠ ও অসাধারণ। তাঁর রচিত, সম্পাদিত ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতেরও বেশি। তিনি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অনুবাদও করেছেন উভয়মুখী।
তিনি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মপাশাঁ, চেখভ, স্ট্রিনবার্গ, ইবসেন, স্যামুয়েল বেকেট, নগীব মাহফুজ, জেএম কোয়েতজি, বেওউলফ ও জোসে সারামাগো প্রমুখ প্রখ্যাত লেখকদের শ্রেষ্ঠ রচনাবলির বাংলা অনুবাদ করেছেন।
একদিকে বাঙালি পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিতি করে তোলা এবং অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা ছিল কবীর চৌধুরীর অনুবাদকর্মের অনন্যসাধারণ সাফল্য।
একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজকর্মী কবীর চৌধুরী অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শিক্ষা, শান্তি ও আন্তসাংস্কৃতিক সমঝোতার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে সম্মাননা লাভ করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাহিত্য পুরস্কার, শেরে বাংলা পুরস্কার, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত ট্যাগোর পীস অ্যাওয়ার্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের উইলিয়ম ক্যারি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি সেন্টার প্রদত্ত উইলিয়ম ক্যারি গোল্ড মেডাল লাভ করেন।
কবীর চৌধুরী দুইহাজার এগারো সালের তেরোই ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ৯/২/২০২১ ইং।