জনপ্রিয় অভিনেতা বুলবুল আহমেদের পুরো নাম তবাররুক আহমেদ বুলবুল। উনিশশো একচল্লিশ সালের চৌঠা সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগা মসি লেনে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবা খলিল আহমেদ ছিলেন একজন শৌখিন অভিনেতা। সুতরাং নাটকে তাঁর উৎসাহ বুলবুল আহমেদ উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছিলেন এ কথা বলাই যেতে পারে।
বুলবুল আহমেদ উনিশশো একষট্টি সালে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে বিএ এবং উনিশশো তেষট্টি সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
বুলবুল আহমেদ কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি চিরকুমার সভা নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। উনিশশো ষাট সালে তিনি ‘ড্রামা সার্কেল’ নামে নাট্য দলে যোগদান করেন এবং ইডিপাস ও আর্মস এ্যান্ড দি ম্যান নাটক দুটিতে অভিনয় করেন।
উনিশশো আটষট্টি সালে টেলিভিশনে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। সে সময়েই অভিনেতা হিসেবে তিনি বুলবুল আহমেদ নাম গ্রহণ করেন।
আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম পরিচালিত ইয়ে করে বিয়ে ছবি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। উক্ত ছবিটিতে তিনি একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এর পরের বছরই তিনি জীবন নিয়ে জুয়া ছবিতে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিজের শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেন।
অভিনয়ে দক্ষতা এবং দৃষ্টিনন্দন অভিব্যক্তি নিয়ে তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাসের চলচ্চিত্র ভাষ্যে দেবদাসের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম।
মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত এবং আকর্ষণ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবি দুটি পরিচালনাও করেন তিনি। ছবি দুটি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে।
তাছাড়া তিনি ওয়াদা, ভালো মানুষ, মহানায়ক গরম হাওয়া, কত যে আপন ছবিতে অভিনয় করেন এবং পরিচালনা করেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে সীমানা পেরিয়ে, মহানায়ক, দীপু নম্বর টু, মোহনা, ভালো মানুষ, শেষ উত্তর, হারানো মানিক, সোনার হরিণ, সূর্য্য কন্যা, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায় উল্লেখযোগ্য।
শেষ বিকালের মেয়ে, বরফ গলা নদী, আরেক ফাল্গুন, ইডিয়ট, মালঞ্চ, বড়দিদি, শুভা ও এইসব দিনরাত্রি তাঁর জনপ্রিয় নাটক। তাঁর অভিনয় দক্ষতা তাঁকে দেশ ও বিদেশে পরিচিত করে তোলে।
বুলবুল আহমেদ তাঁর অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি চারটি সীমানা পেরিয়ে, বধূ বিদায়, শেষ উত্তর এবং দীপু নম্বর টু।
উনিশশো সপ্তাশী সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত ছবিটির শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে বুলবুল আহমেদ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তাছাড়া তিনি জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এনজেলেস পুরস্কার, টেনশিনাস পদক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির পুরস্কার, ফুলকলি পুরস্কার, সাংস্কৃতিক রিপোর্টার পুরস্কার, ঈষান সাংস্কৃতিক একাডেমি পুরস্কার, টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার, চিত্রালী পদক লাভ করেন।
উনিশশো বিরাশি সালে তাঁকে জাতীয় বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) চলচ্চিত্র এবং দুহাজার চার সালে অগ্রগামী সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকর্তৃক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দুইহাজার দশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ চৌদ্দই জুলাই ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তাংঃ- ১৪/৭/২০২১ ইং।