বাংলাদেশে অভিনয়ের জগতে যে কয়েকজন কিংবদন্তি মানুষ তাদের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে সকলের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় টেলি সামাদ।।
“আমি মনে করি কৌতুক পরিবেশন সৃষ্টিশীল একটা কাজ এবং সবচেয়ে কঠিন। এই কঠিন কাজটি দর্শকদের কাছে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে, সুতরাং হাস্যরসের সহজাত একটা ক্ষমতা শিল্পীর থাকতে হবে। যিনি তার চোখ-মুখ, হাত-পা, বক্তব্য, আঞ্চলিকতা– এগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারবেন তিনি সফল হবেন।”
এই কথাগুলো বলে গিয়েছিলেন সকলের প্রিয় এই শিল্পী যিনি তার অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে কখনও কখনও সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন।।
প্রিয় এই মানুষটির আসল নাম আবদুস সামাদ। টেলিভিশনে অভিনয়ের সুবাদে তাকে সবাই টেলি সামাদ নামেই ডাকা শুরু করেন। টেলিভিশন থেকে চলচ্চিত্রে পা রাখায় তার এ নাম হয়। তিনি নিজেও আর এটা বদলাননি। ‘টেলি সামাদ’ হিসেবেই তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন।
উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আট জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে টেলি সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। শহরের উপকণ্ঠ নয়াগাঁও এলাকার সন্তান সামাদ। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা বড় ভাই চারুশিল্পী আবদুল হাইকে অনুসরণ করে টেলি সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তি হন।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের নেশা টেলি সামাদকে চলচ্চিত্র জগতে টেনে আনে। একই সঙ্গে মঞ্চ, টিভি ও বেতারেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। প্রথমে টিভি নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বলে সহকর্মী এবং ভক্তরা তার নাম দিয়েছেন টেলি সামাদ।
উনিশশো তিয়াত্তর সালের দিকে নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘কার বৌ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে টেলি সামাদ এ অঙ্গনে পা রাখেন। ছয় শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। ‘পায়ে চলার পথ’ ছায়াছবিটির মাধ্যমে তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
দুই হাজার পনেরো সালে তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’।
টেলি সামাদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- নয়ন মণি, মাটির ঘর, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিলদার আলী, অশিক্ষিত, ফকির মজনু শাহ, মধুমিতা, মিন্টু আমার নাম, নদের চাঁদ, মাটির ঘর, দিন যায় কথা থাকে, নওজোয়ান, ভাত দে, সোহাগ, পৃথিবী, কথা দিলাম, শেষ উত্তর, হারানো মানিক, চন্দ্রলেখা, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, মনা পাগলা, সুজন সখী, লাইলী মজনু ইত্যাদি।
টেলি সামাদের অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্রই ছিল ব্যবসা সফল। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘মনা পাগলা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি।
পঞ্চাশটির বেশি চলচ্চিত্রে তিনি গানও গেয়েছেন। দক্ষ অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন।
তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে কৌতুক অভিনেতার ক্যাটাগরি বাদ দেয়া নিয়ে বেশ আক্ষেপ ছিল তার মধ্যে।
দুইহাজার উনিশ সালের ছয় এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রিয় এই মানুষটির জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাই অনেক অনেক ভালোবাসা এবং অজস্র শ্রদ্ধা।
তারিখঃ- ৮/১/২০২১ ইং।