দীনেশ দাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙ্গালি কবি ।
উনিশশো তেরো সালের ষোলোই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের আদিগঙ্গার তীরে আলিপুরের চেতলা অঞ্চলে মামাবাড়ীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে, বারো বছর বয়স থেকে দীনেশ দাস ছড়া লিখতে শুরু করেন। নবম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে পনেরো বছর বয়সে উনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
পাশাপাশি উনিশশো ত্রিশ সালে দীনেশ দাস ম্যাট্রিকও উনিশশো বত্রিশ সালে আই এ পাস করেন। এরপর উনি স্কটিশ চার্চ কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন।
উনিশশো চৌত্রিশ সালে দীনেশ দাসের প্রথম কবিতা ‘শ্রাবণে’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।পরের বছর অর্থাৎ উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালে উনি কার্শিয়াং এর খয়াবাড়ি চা বাগানে চাকরিতে যোগ দেন।
এক বছরের মাথায় উনি কলকাতা ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে উনি ‘প্রথমবৃষ্টির ফোঁটা’, ‘মৌমাছি’, ‘নখ’, ‘হাই’, ‘চায়ের কাপে’ সহ একেএকে নানা কবিতা লিখতে থাকেন।
তখনও তার কোন কবিতা সংকলন প্রকাশিত না হওয়া সত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওনার ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলন গ্রন্থে ‘মৌমাছি’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতী জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে উনিশশো সাঁইত্রিশ সালে দীনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি।
ব্রিটিশ সরকারকে ধোঁকা দিতে পরিকল্পিতভাবে হাতুড়ি শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের ভয়ে এক বছর ‘কাস্তে’ ছাপার মুখ দেখেনি।
উনিশশো আটত্রিশ সালে কবিবন্ধু অরুণ মিত্রের সৌজন্যে তা আনন্দবাজার শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়। পরে পুলিস তার বাসস্থান তল্লাশি করে এবং তাকে লর্ড সিন্হা রোডে আটকে রাখা হয়।
উনিশশো উনচল্লিশ সালে উনি ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে যোগ দেন। সাত বছর চাকরির পর উনিশশো ছেচল্লিশ সালে কর্মস্থলে ইউনিয়ন গড়তে গিয়ে বাধা পেয়ে উনি কাজে ইস্তফা দেন।
এই সময় উনি দৈনিক কৃষক ও মাতৃভূমি কাগজে কিছুদিন কাজ করেন। চলচিত্রে গীতিকার ও সহ পরিচালকের কাজেও যুক্ত ছিলেন।
উনিশশো উনষাট সালে প্রকাশিত দীনেশ দাসের প্রথম শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন ‘উল্টোরথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। উনিশশো আশি সালে ওনাকে নজরুল আকাদেমি থেকে প্রথম নজরুল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ওনার শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘রাম গেছে বনবাসে’র জন্য দীনেশ দাস উনিশশো বিরাশি সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন।
উনিশশো পঁচাশি সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ তেরোই মার্চ কবি দীনেশ দাস শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ১৩/৩/২০২১ ইং।