যমুনা কি বলতে পারে,
কতবার কেঁদেছে রাধা।।
যমুনা কি বলতে পারে ?
আনমনে চলতে গিয়ে।।
কোন পথে পেয়েছে বাধা !
কথা-সুনীল বরণ
সুর-গোবিন্দ বসু
শিল্পী-শিপ্রা বসু
শিপ্রা বসু ছিলেন হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের খ্যাতনামা বাঙালি শিল্পী। অসাধারণ কারুকার্যময় সুরেলা কণ্ঠের সুবাদে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পাশাপাশি, ঠুমরী, গজল, দাদরা’র জন্য তিনি সমধিক বিখ্যাত ছিলেন।
তবে বাংলা রাগাশ্রয়ী গানে তাঁর অবদান সর্বাধিক।
কোলকাতার এক সঙ্গীতমনস্ক পরিবারে উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালের নয় নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে তাঁর সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় সঙ্গিতাচার্য চিন্ময় লাহিড়ী’র কাছে। সঙ্গীতের প্রতি তীব্র অনুরাগ ও সাধনার শুরু সেই থেকে। এরপর তিনি লখনউ ঘরানায় সামিল হয়ে বিদুষী বেগম আখতারের কাছে ঠুমরী ও গজলের তালিম নেন।
পরবর্তীকালে বেনারস ঘরানার ন্যায়না দেবী’র কাছেও সঙ্গীত শিক্ষা করেন। তবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তাঁকে মূল তালিম ও পৃষ্ঠপোষকতা দেন, পণ্ডিত রবি শঙ্কর। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত নিয়ে আধ্যাবসায় ও ভারতব্যাপী সঙ্গীতানুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, তারই ফাঁকে শিপ্রা বসু বাংলা রাগাশ্রয়ী ও বৈঠকি গানে চিরস্মরণীয় অবদান রেখে চলেন।
তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলির মধ্যে রয়েছে
‘আকাশে যার ওড়ার নেশা’ ‘বাঁশুরিয়া দূরে গিয়ে’ ‘ভালবাসা চোখে’ ‘বল কানে কানে’ ‘চুপি চুপি চলে না’ ‘ফিরে যা বনে’ ‘কেন অন্তহীন বিরহেরই সুর’ ‘কিছুতেই ঘুম আসে না’ ‘বাজে না বাঁশুরী’ ‘কেন মন হোলো’ ‘কেউ বোঝে না কেন’ ‘কোরো না ভুবন’ ‘কোয়েলিয়া গান থামা এবার’ ‘না ডেকে না বলো’ ‘তোমাকে ভালবেসে’ ‘তুমি না এলে’ ‘যমুনা কি বলতে’ প্রভৃতি।
বাংলা আধুনিক গানের মধ্যে রয়েছে ‘ভালবেসে ব্যথা সইবো কেমনে’ ‘মনের দুয়ার খুলে কে’ ‘আমার কবার মরণ হবে বলো’ ‘আমার বাদল দিন’ ‘কাছে আমার মত কাউকে পেলে’ ‘আহা কে রঙ্গ করে গেলো’ ‘আহা মন কেমন করে’ ‘আমার সাদা রঙটা নাও’ ‘আমি গেরুয়া ধূলিতে’ ‘সঙ্গী যে কে মন কে আমার’ ‘ও ভ্রমরা কালো কাজল ভ্রমরা’ ‘এ ভাঙা বসন্ত বেলায়’ ‘বলোনা বলোনা সই ভুলিতে আমারে’ ‘ওগো আমার আগমনী আলো’ ‘জোনাকি চায় না জ্যোৎস্না’ ‘রঙে রঙে কেন তুমি রাঙালে আমায়’ প্রভৃতি।
উল্লেখযোগ্য নজরুল গীতির মধ্যে রয়েছে ‘এসো প্রিয় আরো কাছে’ ‘আমি নতুন করে গড়ব ঠাকুর’ ‘সে দিন ছিল কি গোধূলি লগন’।
এছাড়া ছায়াছবিতেও তিনি গান পরিবেশন করেছেন যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রে বসন্ত কিরণমাখা পাখা তুলে’ (অসময় ছবিতে) ‘চলেছে রেলের গাড়ি’ (জয় জয়ন্তী ছবিতে) ‘ফুলের দোলায় আজি দোলে শ্যামরাই’ ( জীবন নিয়ে ছবিতে) প্রভৃতি।
শিপ্রা বসুর স্বামী স্বনামধন্য তবলা-বাদক পণ্ডিত গোবিন্দ বসু তাঁকে নিরন্তর উৎসাহ আর প্রেরণা জুগিয়েছেন। যদিও তারা একত্রে কখনো মঞ্চে আসেন নি, তবুও তাদের পারস্পরিক প্রশংসা তাঁদের সফলতা এনে দিয়েছে।
শিপ্রা বসু দুইহাজার আট খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বাইশে এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২২/০৪/২০২১ ইং।