সুভো ঠাকুর ছিলেন মহর্ষি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপ্রৌত্র। পুরো নাম সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর।সাত দশকের জীবনকালে তিনি পরিচিত চিত্র শিল্পী, কবি, পত্রিকা সম্পাদক ও শিল্প সংগ্রাহক হিসাবে।
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে উনিশশো বারো সালের তেসরা জানুয়ারি সুভো ঠাকুরের জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ছবি আঁকায় পূর্ব আর পশ্চিমের স্টাইল মিলিয়ে নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বেঙ্গল স্কুলের শিল্পচিন্তা থেকে দূরে সরে এসে নীরদ মজুমদার প্রদোষ দাশগুপ্ত, গোপাল ঘোষ, পরিতোষ সেন, কমলা দাশগুপ্ত , রথীন মৈত্র, প্রাণকৃষ্ণ পাল প্রমুখ তরুণ শিল্পীদের নিয়ে উনিশশো তেতাল্লিশ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেছিলেন ক্যালকাটা গ্রুপ।
দক্ষ কলাকুশলী শিল্পী বংশীচন্দ্র সেনগুপ্তকে তিনিই আবিষ্কার করেন কাশ্মীরে। আর্ট কলেজে পড়ার সময় ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার চার পাঁচ সংখ্যা তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
ত্রিশের দশকে তাঁর সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা ভবিষ্যৎ ও সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা অগ্রগতি তে তাঁর নিজস্ব ধারার দুঃসাহসিক লেখা, ছবি, পরিকল্পনা ও অঙ্গসজ্জার অভিনবত্ব ও চমকপ্রদ ছিল। তবে সাময়িকপত্রের ইতিহাসে তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান শিল্পকলা সংক্রান্ত পত্রিকা সুন্দরম।
কবি হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। কবিতায় অগ্রমিল ছন্দ নামে এক নতুন ছন্দ করেছিলেন। অনেক সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে ধরে নিয়ে লেখা শুরু করতেন।
কারুশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে তিনি এক বিশিষ্ট কারুশিল্প সংগ্রাহক হয়ছিলেন। অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকা জিনিস ছবি, মূর্তি, পট, পাটা থেকে পুরোনো আসবাব, ঝাড় লণ্ঠন, দোয়াত কলম, দুষ্প্রাপ্য বিরল ইঙ্ক পট, মুঘল আমলের হুকা সিগারেট, চুরুটের পাইপ, পুরোনো মানচিত্র, মনীষীদের চিঠি এরকম অদ্ভুত সব সংগ্রহে সমৃদ্ধ ছিল তাঁর বাড়ি।
কারুশিল্পের প্রতি আকর্ষণ ও অভিজ্ঞতার জন্য তিনি ভারত সরকার তাঁকে অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডিক্র্যাফস বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা নিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করতে পারেননি এবং এক সময় তাঁকে ও তাঁর শিল্প নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে ‘আর্ট অব সুভো ঠাকুর’ সংকলন গ্রন্থে।
শান্তি চৌধুরী দ্য লোনলি পিলগ্রিম নামে তাঁর এক জীবনীচিত্র তৈরি করেন। সুভো ঠাকুর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম মায়ামৃগ, নীলরক্ত লাল হয়ে গেছে, অলাতচক্র, অতন্দ্র আলতামিরা, প্যানসি ও পিকো প্রভৃতি।
উনিশশো পঁচাশি খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ সতেরোই জুলাই তিয়াত্তর বছর বয়সে সুভো ঠাকুর কলকাতায় প্রয়াত হন।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ১৭/৭/২০২১ ইং
