বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে এক অনন্য সুন্দর মাত্রায় অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যারা অনন্য ভূমিকা পালন করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম।
উনিশশো একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর উনিশশো বাহাত্তর সালে তিনিই সর্বপ্রথম পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র “ওরা ১১ জন”।
এছাড়াও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাস অবলম্বনে “দেবদাস” সিনেমাটি নির্মাণ করে সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রেরও সার্থক রূপকার তিনি।
সংগ্রাম, শুভদা, হাঙর নদী গ্রেনেড, পদ্মা মেঘনা যমুনা, হাছন রাজার মতো জীবনমুখী সর্বমোট পঁয়ত্রিশটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে এ দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন এবং স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
উনিশশো একচল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ তেইশে অক্টোবর বিক্রমপুর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে আজকের চাষী নজরুলের জন্ম।
তার এই নামটি রেখেছিলেন শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক। তার সঙ্গে রাজনীতি করতেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন যিনি নবযুগ ও লাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের ‘চাষী’ আর কাজী নজরুল ইসলামের ‘নজরুল ইসলাম’ মিলিয়ে নাম দেন ‘চাষী নজরুল ইসলাম’।
চাষী নজরুলের বাবার চাকরিস্থল জামশেদপুরে তার শৈশব কেটেছে। বিক্রমপুরে চাষীদের বাড়ির পাশেই ছিলো একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন। এখানেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করা হয় তাকে। এখন এর নাম সমরপুর হাইস্কুল ও কলেজ। ক্লাস টুতে ওঠার পর চাষীর বাবা আবার তাকে নিয়ে গেলেন জামশেদপুরে। ওখানে বাবার প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত পড়েন তিনি। তারপর ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। তারপর আরডি টাটা হাইস্কুলে এইচএসসি পাস করেন চাষী। পরবর্তীতে তিনি বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি উনিশশো উনসত্তর সালের ষোলোই সেপ্টেম্বর দেশের অন্যতম বিখ্যাত কাজী পরিবারের কে.জি.আহমেদের মেয়ে জোত্স্না কাজীকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান – চাষী আন্নী ইসলাম ও চাষী মান্নি ইসলাম।
শুধুমাত্র চলচ্চিত্র পরিচালনায় নয় বরং এর পাশাপাশি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চারবার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন চাষী নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য, যৌথ প্রযোজনা কমিটির নির্বাহী সদস্য, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে গেছেন প্রিয় এই মানুষটি।
দুইহাজার পনেরো সালের এগারোই জানুয়ারি চুয়াত্তর বছর বয়সে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চাষী নজরুল ইসলাম নিজেকে চলচ্চিত্র নির্মান প্রক্রিয়ায় জড়িত রেখেছিলেন। এমনকি মৃত্যুর পরও তার নির্মানাধীন দুটি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে সেগুলো মুক্তি দেয়া হয়।
আজ চলচ্চিত্র জগতের অতি উজ্জল এই নক্ষত্র চাষী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন সকল স্তরের সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২৩/১০/২০২১ ইং।