‘জীবনই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতাই জীবন। অভিজ্ঞতাসমষ্টির নাম জীবন আর জীবনকে খন্ড খন্ড করে দেখলে এক-একটি অভিজ্ঞতা। এক-একটি অভিজ্ঞতা যেন এক এক ফোঁটা চোখের জলের রুদ্রাক্ষ। সব কটা গাঁথা হয়ে যে তসবী-মালা হয় তারই নাম জীবন।’
‘বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।’
‘চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমত : বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।’
‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়। তাই বোধ করি খৈয়াম তাঁর বেহেশতের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে কেতাবের কথা ভোলেন নি।’
উক্তিগুলো বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর যিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।
উনিশশো চার সালের তেরোই সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি আধুনিক বাংলাসাহিত্যের একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার পাশাপাশি অনুবাদ সাহিত্য ও রম্যরচয়িতা হিসাবেও সাহিত্যমহলে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন।
বিশেষত তাঁর ভ্রমণবৃতান্তমুলক কাহিনীগুলির জন্যই তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে রয়েছেন। তিনি ছিলেন বহুভাষাবিদ, তাঁর পান্ডিত্যগুণে এবং সার্থক রম্যরচনাকার হিসাবে উতকৃষ্ট প্রশংসার দাবী রাখেন পাঠকমহলে।
সাহিত্যে জগতে তাঁর প্রথম প্রবেশ ‘দেশে বিদেশে’ গ্রন্থটি লিখে। এটিই তাঁকে সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। আফগানিস্তানের স্মৃতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান, সাধারণ মানুষের জীবন অসাধারণ গদ্য রসে মহীমময় হয়ে উঠেছে।
তাঁর এই গ্রন্থটিকে ভ্রমণকাহিনী আবার একই সাথে রম্যরচনাও বলা চলে।
সৈয়দ মুজতবা আলী শিক্ষালাভের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। সেই ভ্রমণপথের অভিজ্ঞতাবশত তিনি নানা ভ্রমণমুলক কাহিনী রচনা করেছেন।
তাঁর কিছু প্রবন্ধ ফিচার ধর্মী কিছু আবার নেহাতই রম্যরচনা। তাঁর প্রবন্ধ পড়লে মনে হয়, তিনি যেন পাঠকের সঙ্গে সরস রসিকতা করতে বসেন।
যেমন ‘পঞ্চতন্ত্রে ‘র ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ এখানে গল্পের ঢং লক্ষ্য করার মত। মাছির প্রসঙ্গ দিয়ে গল্প শুরু হয়, আবার রাজার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গল্প শেষ হয়।
হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শীতা এবং এর মধ্যে দিয়ে গভীর জীবনবোধ তাঁকে বাংলাসাহিত্যে এক বিশেষ খ্যাতির আসনে বসিয়েছে। তাঁর রম্যরচনাবিষয়ক রচনাগুলি পাঠকদের চিত্তবিনোদন ও আনন্দদানে সমর্থ হয়েছে। আবার অনেকসময় হাসির অন্তরালে হৃদয়ের অনেক বেদনা ও সত্যকেও প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখার মধ্যে।
উনিশশো চুয়াত্তর সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ এগারোই ফেব্রুয়ারি ঢাকাশহরে সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনাবসান হয়।লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
তারিখঃ- ১১/২/২০২১ ইং।