ইঁদুর বলে বয়স হলে আমি-ই হব হাতি,
দূর্বা বলে বংশ হব আমি তো তার নাতি।
রুই কাতলা যা হোক হব কয় পুঁঠি মাছ হেঁকে,
গুগলি বলে শঙ্খ হব/হুগলী গাঙেই থেকে’’
——-কালিদাস রায়]
সুন্দর এই ছড়াটির রচয়িতা কবি, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য সমালোচক কালিদাস রায়। প্রগাঢ় পল্লীপ্রীতির সঙ্গে রোমান্টিক রসকল্পনা এবং কবিতার সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর ভাষার ব্যবহারে তার কাব্যগুলো পাঠকদের কাছে আজও হৃদয়গ্রাহী করে রেখেছে।
কবিশেখর কালিদাস রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, সমালোচক। এই ‘কবিশেখর’
উপাধিটি তিনি অর্জন করেন রংপুর সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে।
আঠারোশো উননব্বই সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বাইশে জুন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কড়ুই গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
উনিশশো দশ সালে তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করে স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনশাস্ত্রে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন।
রংপুরের উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী হাইস্কুলের সহশিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরে কিছুদিন চবিবশ পরগনার বড়িশা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার পর রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের সহায়তায় তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখায় প্রধান শিক্ষকরূপে যোগদান করেন এবং উনিশশো বায়ান্ন সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
কবিশেখর কালিদাস রায় ‘রসচক্র’ নামে একটি সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং রবীন্দ্র ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন।
রোমান্টিকতা, প্রেম, পল্লিজীবন, সমাজ, ঐতিহ্যপ্রীতি এবং বৈষ্ণবভাব তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়।
তাঁর মোট কাব্যগ্রন্থ উনিশটি। এগুলোর মধ্যে কুন্দ ছিলো তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্য।
এ ছাড়া পর্ণপুট, ঋতুমঙ্গল, রসকদম, হৈমন্তী, লাজাঞ্জলি, ব্রজবেণু, চিত্তচিতা, পূর্ণাহুতি ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
তিনি কালিদাসের শকুন্তলা, কুমারসম্ভব এবং মেঘদূতের অনুবাদ করেন। প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়, প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য, পদাবলী সাহিত্য, শরৎ সাহিত্য ও সাহিত্য প্রসঙ্গ তাঁর সমালোচনা গ্রন্থ।
তাঁর রচিত শিশুতোষ গল্পকাহিনীও আছে। ‘বেতালভট্ট’ ছদ্মনামে রচিত তাঁর রম্যরচনাগুলি পাঠকসমাজে খুবই সমাদৃত হয়েছে।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কালিদাস বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদের ‘কবিশেখর’ উপাধি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ ও ‘সরোজিনী স্বর্ণপদক’, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’।
উনিশশো একাত্তর সালে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন।
উনিশশো পঁচাত্তর সালের পঁচিশে অক্টোবর কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২২/৬/২০২১ ইং।