বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও কালজয়ী গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও কালজয়ী গীতিকার ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগতে যাঁরা অসাধারণ গানের বাণী সাজিয়ে উপহার দিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের খুলনা শহরে উনিশশো বত্রিশ খ্রিস্টাব্দের সাতাশে ডিসেম্বর শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মগ্রহণ করেন।

স্থানীয় স্কুলেই ছিলো তার প্রাথমিক পড়াশোনা। দেশভাগের সময় তারা কলকাতায় চলে যান। আশ্রয় জোটে দক্ষিণ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিক ও চিত্র গ্রাহিকা দিদি শিবানী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে।

আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা শুরু করে স্নাতক হন। কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয় খানপুর স্কুলে সামান্য মাইনের শিক্ষকতার চাকরি পান।

প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী অপরেশ লাহিড়ীর প্রেরণায় “ক্রান্তি শিল্পী সংঘ” এর জন্য গান লিখে খ্যাতি লাভ করেন। পরে এক সাহিত্য সভায়কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রর সাথে সাক্ষাতের পর তাঁরই সহায়তায় আকাশবাণী কলকাতার তালিকাভুক্ত গীতিকার হন তিনি।

এরপর এইচ.এম.ভি থেকে প্রকাশিত হয় সনৎ সিংহের কণ্ঠে গীত তাঁর রচিত জনপ্রিয় গান – “সরস্বতী বিদ্যেবতি তোমায় দিলাম খোলা চিঠি”। তাঁর কবিতা তথা গানে সাধারণ মানুষের সমস্যা উঠে এসেছে।

অপরেশ লাহিড়ী, ভূপেন হাজারিকা, ভি.বালসারা,ইলা বসু মান্না দে’র সঙ্গে তাঁর কাজ প্রশংসনীয়। গীতিকার সুনীলবরণের কথায় –

” শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণ ছিল আলাদা স্টাইলে গান লেখার। … ও আদর্শের কাছে কখনো মাথা নত করেনি। নির্বাচিত শিল্পী ছাড়া কারুর জন্য গান লেখেননি।”

কবির জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ তথা নিজস্ব সংগীত সংগ্রহ ” গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা” – তে আড়াই শতাধিক সংগীত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এছাড়া তাঁর রচিত নাটকের সংগ্রহ ‘নাটক সংগ্রহ’ নামে একটি গ্রন্থ আছে। চলচ্চিত্রের জন্য গান ও আধুনিক বাংলা গান ছাড়াও চিত্রনাট্য ও নাটক রচনা করেছেন তিনি।

ইলা বসু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, রুণা লায়লা, রুমা গুহঠাকুরতা, কিশোরকুমার, অংশুমান রায়, মান্না দে,ভূপেন হাজারিকা লতা মঙ্গেশকর সহ বহুস্বনামধন্য শিল্পীদের সুললিত কণ্ঠ মাধুর্যে কালজয়ী হয়েছে তাঁর রচিত গানগুলি।

কয়েকটি সেরূপ কালজয়ী গানের উল্লেখ করা হল –

মান্না দে র কণ্ঠে –
‘ভারত আমার ভারতবর্ষ,স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো’
‘ওরে আমার ভালবাসার ইছামতী রে’

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে-
‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’

ইলা বসুর কণ্ঠে –
‘কত রাজপথ জনপথ ঘুরেছি’
‘ আকাশের সিঁড়ি বেয়ে’

রুণা লায়লার কণ্ঠে-
‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’

পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে –
‘শত নামে কত জনে’

সনৎ সিংহ’র কণ্ঠে-
‘সরস্বতী বিদ্যেবতী তোমায় দিলাম খোলা চিঠি’

রুমা গুহঠাকুরতার কণ্ঠে-
‘একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে’

কিশোর কুমারের কণ্ঠে-
‘সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা’
‘হাওয়া মেঘ সরায়ে ফুল ঝরায়ে’

অংশুমান রায়ের কণ্ঠে-
‘বাজে না জীবনের এই বীণা’
‘আমার ব্যাটার বিয়া দিব সময় হয়েছে’
‘ময়লা কাগজ কুড়ানো ছেলে’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে-
‘এই কি পৃথিবী সেই’

ঊষা উথুপের কণ্ঠে-
‘এই তো বেশ আছি একেলা’
‘আমার কবিতা ছবি আঁকে সঞ্চিত ব্যথা’

ভূপেন ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে-
‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল’
‘বিস্তীর্ণ দুপারে’
‘আমি এক যাযাবর’

লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে-
‘ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো’

সমবেত কণ্ঠে-
‘ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম’
‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’

কালজয়ী গানের এই গীতিকারের সম্মানে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার সৌজন্যে একটি আবক্ষ তাম্রমৃর্তি স্থাপন করা হয়।

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় দুইহাজার নয় খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আট আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ৮/৮/২০২১ ইং।

Facebook Comments