প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মমতাজউদদীন আহমদ ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

মমতাজউদদীন উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালের আঠারোই জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত হয়।

তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।

উনিশশো চৌষট্টি সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি উনিশশো ছিয়াত্তর থেকে উনিশশো আটাত্তর সাল পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খ চিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। এছাড়ও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মমতাজউদদীন শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।

মমতাজউদদীন উনিশশো সাতাত্তর থেকে আশি সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। দুইহাজার এগারো সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত, বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য নাটক সমূহের মধ্যে রয়েছে নাট্যত্রয়ী, হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, কি চাহ শঙ্খ চিল, প্রেম বিবাহ সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, রাজা অনুস্বরের পালা, ক্ষত বিক্ষত, রঙ্গপঞ্চাদশ, বকুল পুরের স্বাধীনতা, সাত ঘাটের কানাকড়ি, রাক্ষসী প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য গদ্য রচনাসমগ্রের মধ্যে রয়েছে
চার্লি চ্যাপেলিন-ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়, আমার ভিতরে আমি, জগতের যত মহাকাব্য, হৃদয় ছু আছে, লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, মহানামা কাব্যের গদ্যরূপ, সাহসী অথচ সাহস্য, নেকাবী এবং অন্যগণ, জন্তুর ভিতর মানুষ, ভালবাসিলেই, সজল তোমর ঠিকানা (উপন্যাস), এক যে জোড়া, এক যে মধুমতি (উপন্যাস) অন্ধকার নয় আলোর দিকে প্রভৃতি।

শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, নাট্যকলায় অবদানের জন্য দুইহাজার আট সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি।

চুরাশী বছর বয়সে দুইহাজার উনিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ দোসরা জুন ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ২/৬/২০২১ ইং।

Facebook Comments