সংস্কৃতিপ্রেম আর দেশ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় ওয়াহিদুল হক ছিলেন সবার প্রিয়।অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে এই গুণী ব্যক্তি বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিতে জাগিয়ে রেখেছেন দেশের মানুষকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী সাংস্কৃতিক দল নিয়ে জাগ্রত রেখেছেন মুক্তিসেনাদের। দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র গবেষণায়ও অন্যতম পুরোধা পুরুষ ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক দলের সংগঠনসহ ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন, আনন্দধ্বনি, নালন্দা, ব্রতচারী সমিতি, সরোজ প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। জীবনভর ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েও সঙ্গীত প্রসারের কাজে ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ওয়াহিদুল হকের জন্ম উনিশশো তেত্রিশ সালের ষোলই মার্চ ঢাকার কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল মনোহরীয়া গ্রামে। তার বাবা আবু তাইয়েব মাজহারুল হক ও মা মেওয়া বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশশো সাতান্ন সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘চেতনাধারায় এসো’, ‘গানের ভেতর দিয়ে’, ‘সংস্কৃতি জাগরণের প্রথম সূর্য’ ও ‘সংস্কৃতির ভুবন’।
চলচ্চিত্র সংস্কৃতি অঙ্গনেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি পরে বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দুইহাজার এক সাল থেকে আমৃত্যু ‘নালন্দা’র-কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
আনুষ্ঠানিক পুরস্কার বা অবদানের ক্ষেত্রে বরাবরই ভীষণ অনীহা ছিল তার। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তার ‘জসীমউদ্দীন পুরস্কার’ ও ‘কাজী মাহবুব উল্লাহ পুরস্কার’ পাওয়ার কথা জানা যায়। সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইহাজার আট সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন ওয়াহিদুল হক। এছাড়া তিনি কাজী মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণ পদক, বাংলা একাডেমী সম্মানসূচক ফেলোশীপ লাভ করেন। শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য দুইহাজার দশ সালে বাংলাদেশের ‘সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার’ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত হন তিনি।
দুইহাজার সাত সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ সাতাশে জানুয়ারি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল স্তরের সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
তারিখঃ- ২৭/১/২০২১ ইং।