খ্যাতিমান নাট্যকার এবং অভিনেতা আব্দুল কাদেরর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আব্দুল কাদের ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান নাট্যকার এবং অভিনেতা ছিলেন। উনিশশো চুরানব্বই সালে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে তিনি বদি চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের কাছে তিনি ‘বদি’ নামে পরিচিতি পান।

এছাড়া তিনি জনপ্রিয় বাংলাদেশী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তার অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। আব্দুল কাদের অভিনয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও মূল পেশা হিসাবে তিনি একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আব্দুল কাদের উনিশশো একান্ন সালের পহেলা এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানের মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন উনিশশো বাহাত্তর-চুয়াত্তর সাল পর্যন্ত পরপর তিন বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্যসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। উনিশশো পঁচাত্তর সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

উনিশশো তিয়াত্তর সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে ছিলেন।

উনিশশো চুয়াত্তর সালে তিনি ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস এর সহ সভাপতি ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন। উনিশশো বাহাত্তর সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ এ সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

উনিশশো বিরাশি সাল থেকে টেলিভিশন ও উনিশশো তিরাশি সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন। টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ’এসো গল্পের দেশে’। তিনি হুমায়ূন আহমেদ রচিত কোথাও কেউ নেই ধারাবাহিক নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয়তা পান।

থিয়েটার নাটকে প্রায় ত্রিশটি প্রযোজনা সহ এবং একশোটিরও বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া টেলিভিশনে প্রায় দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নিয়মিত মামার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও অংশ নিয়েছেন।

তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন, মেরাজ ফকিরের মা প্রভৃতি।

তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে রং নাম্বার এবং ভালোবাসা জিন্দাবাদ।

দুইহাজার বিশ সালের ছাব্বিশে ডিসেম্বর আব্দুল কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ২৬/১২/২০২১ ইং।

Facebook Comments