বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং নাট্যকার নুরুল মোমেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নুরুল মোমেন ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং  নাট্যকার।

উনিশশো ছয় সালের পঁচিশে নভেম্বর তৎকালীন যশোর জেলা বর্তমান ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশশো উনত্রিশ সালে বিএ পাস করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করে উনিশশো ছত্রিশ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন।

নুরুল মোমেনের প্রথম নাটক রূপান্তর উনিশশো বিয়াল্লিশ সালে ঢাকা বেতার এ প্রচারিত হয়। তিনি নিজে নাটকটি পরিচালনা করেন। উনিশশো সাতচল্লিশ সালে নাটকটি গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয়।

তাঁর নেমেসিস নাটক শনিবারের চিঠি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালে। গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় উনিশশো আটচল্লিশ সালে। নাটকটি পঞ্চাশ-দশকের মন্বন্তরের পটভূমিতে রচিত। এর রচনাশৈলী ও পরিকল্পনা অভিনব।

একটি মাত্র চরিত্রের মাধ্যমে দীর্ঘ সংলাপের ভিতর দিয়ে পুরো নাট্যকাহিনী বিবৃত হয়েছে যার মধ্যে একটি পরিপূর্ণ ছবি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। ফলে নাটকটি নাট্যামোদীদের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় এবং এ নাটকের মাধ্যমে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে অধিষ্ঠিত হন।

নুরুল মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে যোগ দেন উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালে। উনিশশো আটচল্লিশ সালে তাঁর বহুরূপা নামে একটি রম্যরচনা প্রকাশিত হয়।

একই বছর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন অবস্থানকালে তিনি বিবিসি-র বাংলা অনুষ্ঠানে ‘কাকলী’ নামে শিশুদের আসর পরিচালনা করেন। এ সময় লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসে তিনি এক বছর শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ছাড়াও তিনি আইন বিভাগের ডিন, প্রক্টর ও ট্রেজারার ছিলেন। উনিশশো বাহাত্তর সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি ও দ্বন্দ্বসমূহ তিনি ব্যঙ্গরসের মাধ্যমে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেন। নাট্যশিল্পী হিসেবে এটা তাঁর বড় কৃতিত্ব।

তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত নাটক যদি এমন হতো, নয়া খান্দান, আলোছায়া, আইনের অন্তরালে, শতকরা আশি, রূপলেখা ও যেমন ইচ্ছা তেমন।

সাহিত্যকর্মে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি কলকাতায় সংবর্ধনা, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এর ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার্স সংগঠনের সংবর্ধনা, ব্রিটেনের থিয়েটার ব্যক্তিত্বগণ কর্তৃক সংবর্ধনা, বাংলাদেশের থিয়েটার নাট্যদল কর্তৃক সংবর্ধনা ও একুশে পদক লাভ করেন।

উনিশশো উননব্বই সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ ষোলই ফেব্রুয়ারী তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৬/২/২০২১ ইং।

Facebook Comments