বাঙালীর সাধারণ প্রাত্যহিক জীবন তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনায় বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে যা তৎকালীন বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায়ও সেইভাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি। বঙ্কিম যুগে আবির্ভূত হয়েও তিনি রােমান্সের চর্চায় আগ্রহী না হয়ে বাঙালীর গার্হস্থ্য জীবনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। সুতরাং তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব দেখিয়ে গেছেন একথা বলাই বাহুল্য।
আঠারোশো পঁয়তাল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ একত্রিশে অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার জেলার বাগআঁচড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ছােট-বড় সুখ-দুঃখের জালবােনা পরিচিত দিনরজনীর সংসারে অতি সাধারণ নরনারীকে অহরহ যে কঠিন রূঢ়তার সম্মুখীন হতে হয় তারই একটা ছােট কাহিনী নিয়ে তারকনাথ ‘স্বর্ণলতা’ রচনা করেন।
এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি এর পর আরাে চার খানি উপন্যাস রচনা করেন- ‘ললিত সৌদামিনী’, ‘হরিষে বিষাদ’, ‘তিনটি গল্প’ এবং ‘অদৃষ্ট’। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এদের কোনটিই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকায় ‘স্বর্ণলতা’ উপন্যাসটি প্রথমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তার রচিত স্বর্ণলতা উপন্যাসটিতে প্রথম গ্রামের গরিব ভদ্র বাঙালির সাংসারিক সুখদুঃখের অনুজ্জ্বল জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়।
উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় একটি পত্রিকায়। পরে এটি আঠারোশো চুয়াত্তর খ্রীষ্টাব্দে বই আকারে প্রকাশিত হয়। স্বর্ণলতা ছিল একটি অত্যন্ত সরল রচনা।
এই উপন্যাসটি রাজশাহীর জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকার প্রথম বর্ষে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় বারোশো উনআশি বঙ্গাব্দে। অমৃতলাল বসুর বসুর নাটক সরলা তার এই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী যা স্টার থিয়েটারে আঠারোশো অষ্টাশি সালে প্রথম অভিনীত হয় ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যশোরে অবস্থান করা কালীন নিজে কল্পলতা মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
তারকনাথের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিষে বিষাদ এবং অদৃষ্ট । তার একটি গল্পের বই তিনটি গল্প প্রকাশিত হয়। এই সমস্ত রচনায় লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছিল। তার অসমাপ্ত উপন্যাসটির নাম বিধিলিপি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ করার পর যে কয়েকজন লেখক তার প্রভাব এড়িয়ে সাহিত্য সৃষ্টিতে সফল হয়েছিলেন তাদের মধ্যে তারকনাথ অন্যতম। বঙ্কিমি প্রভাব ও রোমান্টিকতা মুক্ত সমসাময়িক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য।
আঠারোশো একানব্বই সালের বাইশে সেপ্টেম্বর তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ৩১/১০/২০২১ ইং।