মুক্তবুদ্ধিচর্চার অন্যতম প্রবক্তা, উদার মানবতাবাদী ও মননশীল প্রবন্ধকার বাংলা ভাষার জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

 

মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক ছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ-

‘রুচিবান লোক দশের একজন নয়, দশ পেরিয়ে একাদশ।’ এছাড়াও আরও বলেছিলেন,

‘ধর্ম্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জ্জিত লোকের ধর্ম্ম।’

মোতাহের হোসেন চৌধুরী উনিশশো তিন সালে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

উনিশশো তেতাল্লিশ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে তার সহপাঠী ছিলেন মুহম্মদ আবদুল হাই ও আহমদ হোসেন।

শিক্ষকদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার, আশুতোষ ভট্টাচার্য, জসীমউদ্‌দীন প্রমুখ যশস্বী পণ্ডিতবর্গের সাহচর্য পেয়েছিলেন তিনি।

উনিশশো সাতচল্লিশ সালে দেশভাগের পর চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করে উনিশশো ছাপান্ন সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। সেসময় তিনি চট্টগ্রাম কলেজে সাহিত্যিক আবুল ফজলের সহাচর্য পেয়েছিলেন সহকর্মী হিসেবে।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি প্রথমদিকে কবিতা বেশি লিখতেন। বাঙালী মুসলমান সমাজের অগ্রগতির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত “বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের” সাথে যুক্ত ছিলেন।

তিনি এই আন্দোলনে কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী ছিলেন। তিনি ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এর নানা সভা ও সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রবন্ধ পাঠ করেন।

এর মধ্যে আমাদের দৈন্য সাহিত্য সমাজের পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন, আদেশপন্থী ও অনুপ্রেরণাপন্থী ষষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলন ও মুসলমান সাহিত্যিকদের চিন্তাধারা অষ্টম বার্ষিক সম্মেলনে পাঠ করা হয়।

এছাড়াও মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র শিখার পঞ্চম বর্ষে তার প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ ও বৈরাগ্যবিলাস প্রকাশিত হয়। তিনি বিচিত্রা, মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত, ছায়াবীথি, বুলবুল প্রভৃতি সাহিত্য পত্রিকাতেও প্রবন্ধ লিখেছিলেন।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সংস্কৃতি কথা’। এছাড়াও তার অনুবাদকৃত দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ক্লাইভ বেলের Civilization গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত ‘সভ্যতা’ এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের Conquest of Happiness গ্রন্থের অনুবাদ ‘সুখ’।

সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায় উনিশশো পঁচানব্বই সালে বাংলা একাডেমি তার প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা রচনাবলি আকারে প্রকাশ করে।

মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনীতে মুক্তবুদ্ধি, মননশীলতা, মানবতার ছাপ পাওয়া যায়। তিনি পরিশীলিত গদ্যের রচয়িতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে পরিচিত। তার লেখায় প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তার রচনায় সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ, মানবতাবোধ ইত্যাদি বিষয়াবলী বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, সুন্দর, মহৎ ও ভালোভাবে জীবনযাপনের উপায় সন্ধান করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে উনিশশো ছাপান্ন সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আঠারোই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৮/৯/২০২১ ইং।

Facebook Comments