আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শামসুর রহমান বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি।

ঢাকা শহরের মাহুতটুলিতে উনিশশো উনত্রিশ সালের তেইশে অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। তিনি এক জন নাগরিক কবি ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দু’টি কবিতা খুবই জনপ্রিয়। উনিশশো উনপঞ্চাশ সালে তাঁর কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়।

শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে নানা ছন্দনাম নিয়েছেন সিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক।

পাকিস্তান সরকারের আমলে কলকাতার একটি সাহিত্য পত্রিকায় মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) নামে কবিতা ছাপা হয়। ওই নাম দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক আবু সয়িদ আইয়ুব।

শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে উনিশশো আটান্ন সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ নামক কবিতা।

বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাঁকে উদ্দেশ করে লেখেন অসাধারণ কবিতা ‘টেলেমেকাস’।

রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তানে কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরও স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দিন।

উনিশশো আটষট্টি সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে কবি লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’।

উনিশশো উনসত্তর সালের বিশ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহিদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিক ভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন শামসুর রাহমান এবং তিনি লিখেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদির পাড়াতলি গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’।

শামসুর রাহমান উনিশশো সপ্তাশী সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। উনিশশো সপ্তাশী থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, দ্বিতীয় বছরে ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা’, তৃতীয় বছরে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং চতুর্থ বছরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লেখেন।

উনিশশো একানব্বই সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা’। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল।

শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডুক মৌলবাদীরা। তাঁকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এত কিছুর পরও কবি তাঁর বিশ্বাসের জায়াগায় ছিলেন অনড়।

শামসুর রহমানের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছেষট্টি। তিনি চারটি উপন্যাসও লিখেছেন। অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন কবি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আনন্দ পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং যাদবপুর ও রবিন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট।

ছিয়াত্তর বছর বয়সে দুইহাজার ছয় সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ সতেরোই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৭/৮/২০২১ ইং।

Facebook Comments