থার্ড থিয়েটারের প্রবক্তা গুণী নাট্যব্যক্তিত্ব বাদল সরকারের জন্মবার্ষিকী আজ

থার্ড থিয়েটার নামক ভিন্ন ধারার নাটকের প্রবক্তা তিনি। বিনোদনের মাধ্যম নাটক হলেও তা যে কখনো কখনো হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তিনি। মঞ্চের বাইরে সাধারণ মানুষের ভেতর নাটক’কে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছেন তিনি।

তাঁর মতো একজন প্রভাবশালী ভারতীয় নাট্যকার এবং নাট্য-পরিচালক সময়ের নিরিখে সদা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে রয়েছেন যাকে এক কথায় বলা যায় টোটাল থিয়েটার পার্সোনালিটি।

সেই গুণী নাট্যব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বাদল সরকার যার প্রকৃত নাম সুধীন্দ্রনাথ সরকার।

উনিশশো পঁচিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ পনেরোই জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন বাংলা থিয়েটারের এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব।

সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশশো বিরানব্বই সালে তিনি তুলনামূলক সাহিত্যে ‘মাস্টার অফ আর্টস’-এর ডিগ্রি অর্জন করেন।

উনিশশো সত্তর সালে নকশাল আন্দোলনের সময়ে তাঁর লেখা প্রতিষ্ঠান বিরোধী নাটকগুলির জন্য তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন জনমানসে।

থিয়েটারকে প্রসেনিয়াম বা মঞ্চ থেকে বের করে উন্মুক্ত উঠোনে নিয়ে আসেন। নিজের নাট্যদল শতাব্দী’কে থার্ড থিয়েটার গ্রুপে পরিবর্তিত করেছিলেন, যে দলটি উনিশশো সাতষট্টি সালে ‘প্রসেনিয়াম থিয়েটার’ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

দর্শক ও অভিনেতাদের মধ্যে একটা অবস্থান গত দুরত্ব থাকে। এই অসুবিধা দূর করার জন্যই থার্ড থিয়েটারের উদ্ভব। অর্থাৎ দর্শক ও অভিনেতাদের মধ্যে যোগাযোগ যেন আরো দৃঢ় ও স্পষ্ট হয় এবং দর্শকরা নাটকের বিষয়টির সঙ্গে যাতে একাত্ম বোধ করে তাই ছিল থার্ড থিয়েটারের প্রধান লক্ষ্য।

বাংলায় প্রথম অ্যাবসার্ড নাটক লিখেছিলেন বাদল সরকার।

বাদল সরকার জীবিতকালে পঞ্চাশটিরও বেশী নাটক লিখেছিলেন যার মধ্যে এবং ইন্দ্রজীৎ, বাসি খাবার, শাড়ী, স্পার্টাকুস, ভোমা, সাগিনা মাহাতো প্রভৃতি নাটকগুলি থিয়েটারের পাশপাশি বাংলা সাহিত্যকেও ব্যাপক সমৃদ্ধ করেছে।

তাঁর নাটকের সংলাপ তিনি সাধারন মানুষের প্রাত্যহিক জীবন থেকে সংগ্রহ করতেন , যে কারনে তাঁর নাটকগুলো সেইসময়ে চেতনাসম্পন্ন মানুষের মনে গভীর আঁচড় কাটতে পেরেছিল সহজেই।

এখনও পর্যন্ত কেবল তাঁর নাটকগুলোই অন্য ভাষায় সবথেকে বেশী অনুদিত হয়েছে। তাঁর কাজের দ্বারা পরবর্তীকালে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন উল্লেখযাগ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মীরা নায়ার, অমল পালেকর, গিরীশ কার্নাড, সত্যদেব দুবে প্রমুখরা ।

বাদল সরকার পদ্মশ্রী সম্মান পান উনিশশো বাহাত্তর সালে। এছাড়াও উনিশশো আটষট্টি সালে পেয়েছিলেন সঙ্গীত নাটক একাডেমী অ্যাওয়ার্ড, যা পারফর্মিং আর্টস এর সর্বোচ্চ সম্মান হিসাবে গণ্য করা হয়।

দুইহাজার এগারো সালে এপ্রিল মাসে তাঁর ক্ষুদ্রান্তে ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং একই বছর তেরোই মে কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি ছিলেন একজন আদ্যন্ত আধুনিক মানুষ, যাঁর কাজ সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষার থিয়েটারকে তিনি সারা বিশ্বের উন্নত মনস্ক মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তুলেছিলেন। সমগ্র বিশ্বের অগণিত সাহিত্য নাট্যপ্রেমী মানুষদের কাছে সবসময়ের প্রিয় নাট্যকার এবং মঞ্চ মুক্ত নাটকের পথিকৃৎ হিসেবে রয়ে যাবেন বাদল সরকার ।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে তার জন্মবার্ষিকীতে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তাংঃ- ১৫/৭/২০২১ ইং।

Facebook Comments