বিখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং লেখক বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী হল তার নামে নামকরণ করা হয়।

বলছি বিখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং লেখক বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ এর কথা।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সিন্ধু-হিন্দোল কাব্যখানি ‘বাহার-নাহার’ কে উৎসর্গ করেন। এই নাহার ই ছিলেন শামসুন্নাহার মাহমুদ।

কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বহুবার সাক্ষাৎ হয়। নজরুল তাঁকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো পুণ্যময়ী, ফুলবাগিচা, বেগম মহল, রোকেয়া জীবনী, শিশুর শিক্ষা, আমার দেখা তুরষ্ক, নজরুলকে যেমন দেখেছি ইত্যাদি।

উনিশশো আট সালে ফেনী জেলার গুথুমা গ্রামে তাঁর জন্ম। শিক্ষাজীবনের শুরুতে শামসুন্নাহার চট্টগ্রামের খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হন কিন্তু সামাজিক অনুশাসনের কারণে তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে নিজ চেষ্টায় তিনি প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে ডাক্তার ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের সঙ্গে বিবাহ হওয়ায় তিনি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পান। শামসুন্নাহার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন।

শামসুন্নাহার নিয়মিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতেন। শামসুন্নাহার কিছুদিন নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

উনিশশো বায়ান্ন সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন দলের নেতৃত্ব দেন এবং সমগ্র এশিয়ার জন্য এই আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংঘের আঞ্চলিক ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হন।

এ ধরনের কাজের প্রয়োজনে শামসুন্নাহার বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ড রোম প্যারিস প্রভৃতি দেশ ও নগরী ভ্রমণ করেন।

তাঁর প্রচেষ্টায় উনিশশো একষট্টি সালে পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। উনিশশো বাষট্টি সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

শামসুন্নাহারের প্রথম লেখা কবিতা প্রকাশিত হয় কিশোরদের আঙ্গুর নামক মাসিক পত্রিকায়। আই.এ পড়ার সময় তিনি নওরোজ ও আত্মশক্তি পত্রিকার মহিলা বিভাগ সম্পাদনা করতেন।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত বুলবুল পত্রিকা হবীবুল্লাহ্ বাহার ও শামসুন্নাহার যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেন।

উনিশশো একাশি সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সমাজসেবার জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করেন।

উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে বাংলাদেশ সরকার বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে মরণোত্তর বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করেন।

তাঁর লেখায় সমাজ ও সংস্কৃতি-প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে।

উনিশশো চৌষট্টি সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ দশই এপ্রিল ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তাংঃ- ১০/০৪/২০২১ ইং

Facebook Comments