পুঁথিসাহিত্য বিশারদ ও অনুবাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, পুঁথিসাহিত্য বিশারদ ও অনুবাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া মৃত্যুবরণ করেছিলেন ২০১৬ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

 

১৯১৮ সালের অক্টোবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এ কে এম যাকারিয়া। তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তিন মেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর পরিবার।

 

১৯৪৬ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে বর্ণিল কর্মজীবনের শুভ সূচনা করেন তিনি।

 

প্রত্নতত্ত্বে বিশেষ আগ্রহ থাকায় তাঁকে রংপুর থেকে আগত ছাত্রদের সঙ্গে আজিজুল হক কলেজের পক্ষ থেকে মহাস্থানগড়ে পাঠান প্রিন্সিপাল ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সেখানে গিয়ে প্রত্নসম্পদের রত্নভাণ্ডার দেখে অভিভূত হন তিনি। ভাবতে থাকেন, আমাদের এতো প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আছে! যেদিকে চোখ পড়ে, শুধু ধ্বংসাবশেষ আর ধ্বংসাবশেষ। সেখানে গিয়েই প্রত্নতত্ত্ব ও প্রত্নসম্পদের প্রতি আগ্রহ আরো অনেক বেড়ে যায় তাঁর।

এরপর ১৯৪৭ সালে তিনি যোগদান করেন সিভিল সার্ভিসে। ১৯৫৮ সালে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে পড়াশোনা করতে তাকে পাঠানো হয় সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স শেষে দেড় মাস ছুটি নেন শুধুমাত্র গ্রিস, রোম ও মিসরের পিরামিডসহ ইউরোপ ও আমেরিকার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো দেখার জন্যে। পরে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরও দেখে আসেন তিনি।

 

১৯৬৮ সালে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে সরকারকে রাজি করান, দিনাজপুরের একটি সাইটে খনন কাজ শুরু করতে। যেখান থেকেই আবিষ্কার করা হয় পঞ্চম শতাব্দীর সীতাকোট বিহার।

 

অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি যুব ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন।

 

১৯৭৬ সালে সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর শুরু করেন পৃথিবীর বুকে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার কাজ, তাঁর লেখালেখি।

 

গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস, গাজীকালু ও চম্পাবতী, বাংলাদেশের নৃ-তত্ত্ব ও কুমিল্লা জেলার ইতিহাস সহ বেশ কিছু পুঁথি সম্পাদনার কাজ করেছেন তিনি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও নবাবি আমলের ইতিহাস নিয়েও গবেষণা করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আ ক ম যাকারিয়া। ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন তিনি।

 

বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক পারস্য ভাষায় দক্ষদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি তবকাত-ই-নাসিরী সহ বেশ কিছু পারস্য ভাষার বই বাংলায় অনুবাদ করেন।

 

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়েও তিনি বাসায় বসে একাধিক বই লেখার কাজ করেছেন।

 

একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের জন্যে তিনি যে কাজ করেছেন, এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো তরুণ শিক্ষক বা নবীন গবেষক প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমেই যার শরণাপন্ন হতেন, তাঁর নাম আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া।

 

তাঁর মহাপ্রয়াণ বাঙালী জাতির জন্যে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা এই বহুমাত্রিক প্রতিভার অনন্ত প্রশান্তি ও মাগফেরাত কামনা করি।

 

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে এই কর্মবীরের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।

তারিখ:- ২৪/২/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments