আজ পপসম্রাট আজম খানের জন্মবার্ষিকী

রেললাইনের ঐ বস্তিতে

জন্মেছিল একটি ছেলে

মা তার কাঁদে

ছেলেটি মরে গেছে।।

হায়রে হায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ

 

কত আশা ছিল তার জীবনে

সব স্মৃতি রেখে গেল মরণে

মা তার পাশে চেয়ে বসে আছে

হায়রে হায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ

 

কত মার অশ্রু আজ নয়নে

কে তা মুছাবে বা কেমনে

যে চলে যায় সে কি ফিরে আসে

হায়রে হায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ

 

শিরোনামঃ- বাংলাদেশ

শিল্পীঃ- (আজম খান)

দেশজ লোকসংগীত, পল্লীগীতি, আধুনিক অথবা সমাজ সচেতন গানের সাথে পপ শৈলীর মিশ্রণ দিয়ে গানের এক বিরাট সম্ভার রেখে গেলেন তিনি৷

তাঁর গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি।তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক৷ তাঁর গান সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের জন্য।অথচ এত খ্যাতি এত ভক্ত থাকা সত্ত্বেও আজম খান ছিলেন সহজ-সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। সবার সাথেই ছিল তাঁর সহজ ব্যবহার।তিনি বাংলাদেশের পপসম্রাট এবং সাধারন মানুষের মনের সম্রাট হিসেবেই পরিচিত।

বলছি জনপ্রিয় বাংলাদেশি গায়ক পপসম্রাট পপগুরু আজম খানের কথা। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়।

উনিশশো পঞ্চাশ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ আজকের এই দিনটিতে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন আজম খান।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন।মুক্তিযুদ্ধের পর গঠন করেন পপ ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আজম খানের নতুন ঘরানার সঙ্গীত তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

আজম খানের প্রথম কনসার্ট প্রচারিত হয় ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে। আর এর মাধ্যমেই ব্যান্ড সঙ্গীত পৌঁছে যায় সাধারণ মানুষের কাছে।

১৯৭৪-৭৫ সালে একটি গান বাংলাদেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে নেয়, সেটি হচ্ছে আজম খানের গাওয়া গান ‘হায় রে বাংলাদেশ’।

রেললাইনের পাশে বস্তিতে কোন এক ছেলের মৃত্যুতে তার মায়ের কান্না নাড়া দিয়েছিল আজম খানকে। তা থেকেই এই গানের জন্ম। কিংবদন্তির মত এই শিল্পীর জন্য এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া এ শিল্পীর দেশের প্রতি ছিল অকৃত্রিম টান। আর সেই টানেই তিনি গান গেয়েছেন সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের জন্য।

তাঁর গান ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে। আর তৈরী হয়েছে তার কোটি-কোটি ভক্ত।

তাঁর গানের সহজ ভাষা এবং মানুষকে স্পর্শ করার ক্ষমতার কারণে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এমনকি গ্রামের মানুষের কাছেও তাঁর গান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

স্বাধীনতার পরে তাঁকে বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের বিকাশের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পরবর্তী বেশ কয়েকটি প্রজন্মের শিল্পীদের উপর তাঁর গভীর প্রভাব পড়েছিলো।

সালেকা-মালেকা এবং আলাল-দুলালদের মতো সাধারণ মানুষদের নিয়ে গান আর আড়ম্বরহীন জীবন তাকে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের বুকের গভীরে। আর সেকারণেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজম খানের উপাধি, ‘পপগুরু‘।

আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ (রেল লাইনের ঐ বস্তিতে), ওরে সালেকা, ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল, অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে ইত্যাদি।

মাত্র একষট্টি বছর বয়সে দু’হাজার এগারো সালের পাঁচই জুন তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।।

পপসম্রাট আজম খানের জন্মবার্ষিকীতে আজ লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখ:- ২৮/২/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments