বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্যসংগঠক ও অভিনেতা অমৃতলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

উনিশ শতকে সাধারণ বাংলা রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, অমৃতলাল বসু ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্যসংগঠক ও অভিনেতা।

আঠারোশো তিপান্ন সালের সতেরোই এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি কিছুকাল স্কুলে শিক্ষকতা, পোর্টব্লেয়ারে সরকারি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন এবং পুলিশ বিভাগে চাকরি করেন।

কিন্তু থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণহেতু কোনও পেশায় স্থায়ী হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন এবং কালক্রমে এক জন অভিনেতা, মঞ্চাধ্যক্ষ, নাটক ও গান রচয়িতা হিসেবে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি আঠারোশো বাহাত্তর সালে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফির সহযোগিতায় ন্যাশনাল থিয়েটারে মঞ্চস্থ নীলদর্পণ নাটকে সৈরিন্ধ্রীর ভূমিকায় প্রথম অভিনয়ে অবতীর্ণ হন। পর্যায়ক্রমে নাট্যসম্রাট গিরিশচন্দ্র ঘোষের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা জন্মে।

আঠারোশো পঁচাত্তর সালে তিনি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। প্রিন্স অব ওয়েলসের (সপ্তম এডওয়ার্ড) কলকাতায় আগমন ও জনৈক রাজভক্তের চাটুকারিতাকে ব্যঙ্গ করে লেখা গজদানগদ ও যুবরাজ প্রহসনে অভিনয়ের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আঠারোশো ছিয়াত্তর সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করে।

আঠারোশো অষ্টাশি সালে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ভেঙে যাওয়ার পর অমৃতলাল স্টার থিয়েটারে যোগ দেন এবং দীর্ঘ পঁচিশ বছর এর সঙ্গে যুক্ত থেকে বহু নাটকের অভিনয় ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলা নাট্যসাহিত্যে নাট্যকার হিসেবেও অমৃতলালের নাম সগৌরবে উচ্চারিত হয়। নাটক, প্রহসন ও নকশা জাতীয় তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশ।

সেগুলির মধ্যে তিলতর্পণ, বিবাহ বিভ্রাট, তরুবালা, কালাপানি, বাবু, বিমাতা, আদর্শ বন্ধু, অবতার, চোরের উপর বাটপাড়ি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

তিনি প্রহসন ও ব্যঙ্গ রচনাতেই অধিক সফল হয়েছেন। সমকালের নাগরিক ও গ্রামীণ সমাজের নানা দিক নিয়ে এ সব ব্যঙ্গাত্মক নাটক রচিত হয়। এর জন্য তিনি সমাজের এক শ্রেণির প্রশংসা এবং অপর শ্রেণির নিন্দার ভাগী হন।

তিনি রঙ্গ-ব্যঙ্গমূলক নাটক রচনা ও তাতে অভিনয় করে সুধীসমাজ কর্তৃক ‘রসরাজ’ উপাধিতে ভূষিত হন।

পুরাতন প্রসঙ্গ, পুরাতন পঞ্জিকা ও ভুবনমোহন নিয়োগী নামে তাঁর তিনটি আত্মস্মৃতিমূলক রচনা আছে। অমৃতলাল কবিতা ও গল্প-উপন্যাসও রচনা করেছেন। প্রথম দিকে কবির লড়াইয়ের কবিতা ও হাফ আখড়াই গান লিখেও তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

থিয়েটার জগতের বাইরেও অমৃতলালের পদচারণা ছিল। স্যার সুরেন্দ্রনাথের সহকর্মীরূপে, স্বদেশি যুগের কর্মী এবং বাগ্মী হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

শ্যামবাজার অ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুলের সেক্রেটারি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতি এবং কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য ছিলেন অমৃতলাল।

তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘জগত্তারিণী’ পদকে ভূষিত করে।

উনিশশো উনত্রিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ দোসরা জুলাই অমৃতলাল বসু মৃত্যুবরণ করেন।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তাংঃ- ২/৭/২০২১ ইং।

Facebook Comments