সিলেট জেলার কমলগঞ্জ থানার রহিমপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। স্থানীয় মক্তবে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। কওমি মাদ্রাসায় পাঁচ বছর শিক্ষালাভের পর তিনি ‘মুনশি’ উপাধি লাভ করেন। বলছি কবি, পুথি ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক এবং গবেষক সাহিত্যরত্ন মুনশি আশরাফ হোসেনর কথা।।
আসলে সাহিত্যের বিষয়গুলো সমৃদ্ধ এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তার অবদান ছিলো সত্যি অনস্বীকার্য। তিনি কালীপ্রসাদ মধ্য ইংরেজি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন উনিশশো পনেরো সাল পর্যন্ত। তিন বছর পর অর্থাৎ উনিশশো আঠারো সালে স্বগ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন এবং উনিশশো বাইশ সালে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। এ বছরই তিনি শিলচর নর্মাল স্কুল থেকে গুরু ট্রেনিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মূলত উনিশশো আঠারো সাল থেকেই আশরাফ হোসেনের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়। প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্রপত্রিকায় স্থানীয় সমস্যা নিয়ে লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁর সংগৃহীত ‘মণিপুরের লড়াই’ দীনেশচন্দ্র সেন Eastern Bengal Ballads গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন।আশরাফ হোসেনের মৌলিক গ্রন্থ বারোটি, লোকসাহিত্যবিষয়ক সম্পাদিত গ্রন্থ ত্রিশটি এবং পাঠ্যপুস্তক সতেরোটি। মৌলিক রচনার মধ্যে আশরাফ দেওয়ানা, ভূমিকম্পের কবিতা, আদম খাঁ দেওয়ানের গীত উল্লেখযোগ্য। লোকসাহিত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দিলকুশ কন্যার বারমাসী, শান্তিকন্যার বারমাসী, লিলাইর বারমাসী, মধুমালার গীত প্রভৃতি। পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মক্তবি বাল্যশিক্ষা, সাহিত্য সুধা, নববিধান ধারাপাত প্রভৃতি। তাঁর রচিত সিলহটের ইতিহাস মাসিক আল ইসলাহ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ আশরাফ হোসেন মুর্শিদাবাদ বঙ্গ সাহিত্য মন্ডল কর্তৃক ‘পুরাতত্ত্ববিদ’ যা তিনি অর্জন করেছিলেন উনিশশো পয়ত্রিশ সালে। এরপর নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সঙ্ঘ কর্তৃক ‘সাহিত্যরত্ন’ ও ‘কাব্যবিনোদ’ যা অর্জন করেছিলেন উনিশশো বায়ান্ন সালে। এরপর তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমঘা-ই-কায়েদে আযম’ উপাধিও লাভ করেছিলেন। আসাম সরকার তাঁকে সাহিত্য বৃত্তি ও বাংলা একাডেমী আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ চব্বিশে জানুয়ারি নিজ গ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল স্তরের সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে অনুকরণীয় এই প্রিয় মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
তারিখঃ- ২৪/১/২০২১ ইং।