বরেণ্য ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক নির্মল দাশের জন্মবার্ষিকী আজ

বাঙালি ভাষা বিজ্ঞানী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যশস্বী অধ্যাপক প্রাজ্ঞ গবেষণা নির্দেশক ও বাংলায় সাক্ষরতা আন্দোলনের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন অধ্যাপক নির্মল দাশ।

নির্মল দাশের জন্ম অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলার বীরকুৎসা বর্তমান অধুনা গ্রামে।

উনিশশো চল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারী তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

পিতা ছিলেন চিকিৎসক সুরেন্দ্রনাথ দাশ ও মাতা বিশিষ্ট শিক্ষিকা সবিতা দাশ।
নির্মল দাশের স্কুলের পড়াশোনা শুরুতে মাতুলালয়ে রাজশাহী জেলার তাহিরপুর স্কুলে।
উনিশশো ষাট খ্রিস্টাব্দে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ হতে বাংলায় স্নাতক হন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উনিশশো বাষট্টি খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন।

উনিশশো সত্তর খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতেই প্রখ্যাত অধ্যাপক বিজন বিহারী ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ’ বিষয়ে গবেষণা করে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন।

নির্মল দাশ শিক্ষক হিসেবে উনিশশো বাহাত্তর খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুইহাজার এক খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক যুক্ত হন।

অধ্যাপক বিজন বিহারী ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে তাঁর চমৎকার গবেষণাপত্র ‘বাংলাভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ’ বিগত অর্ধশতাব্দী কালের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।

নিজেকে উত্তরবঙ্গের মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতেন। সেখানকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বিশেষ করে রাজবংশী ও অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাভাষার আঞ্চলিক ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন।

বহু পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ে ক্ষেত্রসমীক্ষা আর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ করেছেন। বাংলাভাষার চরিত্রের ও তার ব্যাকরণের উৎস সন্ধানে অনেক পথ পরিক্রমা করেছেন।

ফলস্বরূপ বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি মৌলিক গবেষণা গ্রন্থে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘চর্যাগীতি পরিক্রমা’, ‘ভাষা পরিচ্ছেদ’, ‘মধ্যযুগের কাব্যপাঠ’, ‘লোকভাষা থেকে ভাষালোক’। কয়েকটি গ্রন্থে’ র সম্পাদনা ছাড়াও স্কুল পাঠ্য পুস্তক সহ শিশু ও কিশোরদের জন্য কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এমনকি স্বল্প সাক্ষরদের উপযোগী চারটি পুস্তক রচনা করেছেন।

উনিশশো ছিয়াশি খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি গঠনের পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধ্যাপক নির্মল দাশ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধ্যাপক পবিত্র সরকার ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধ্যাপক অরুণ কুমার মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এক বাংলা বানান বিধি গঠনের উপসমিতি গঠিত হয়। এঁরাই যে ভিত্তিপত্র তৈরি করেন তারই উপর আকাদেমি বানান অভিধান প্রকাশিত হয়। এই বাংলা বানান অভিধানসহ বাংলা বানানের সমতা বিধানে ও বাংলা লিপিছাঁদের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন তিনি।

ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নির্মল দাশ কেবল ভাষার বিশ্লেষণে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং সমকালীন বাংলার মানুষজনের বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবন যাপনও প্রভাবিত করেছে তাঁকে। বয়স্ক শিক্ষা ও সাক্ষরতার কাজে তিনি আনন্দ পেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সাধারণ মানুষকে লেখাপড়া শিখিয়ে তাদের মনোজগতের উত্তরণ ঘটাতে পারলে তবেই সমাজের উন্নতি হবে।

দুহাজার ষোল সালের চৌঠা মার্চ গুণী এই মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে প্রিয় এই মানুষের জন্মবার্ষিকীতে জানাই অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।

তাং: ১৪/২/২০২১

Facebook Comments