সাহিত্যিক বাণী বসুর জন্মবার্ষিকী আজ

বাণী বসু একজন সুপরিচিত লেখিকা। তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন উনিশশো উনচল্লিশ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ এগারোই মার্চ। তিনি বহু গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ লেখেন পাশাপাশি বহু অনুবাদও করেন লেখিকা বাণী বসু।

একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিতা বাণী বসু আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার অধিকরিণী।

বাণী বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে এম এ করেন উনিশশো বাষট্টি সালে। ছাত্রী জীবন থেকেই নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। তাঁর প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

প্রথম উপন্যাস “জন্মভূমি মাতৃভূমি” প্রকাশিত হয় শারদীয়া আনন্দলোকে উনিশশো সপ্তাশী সালে। কিন্তু তার আগেই তাঁর অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে।

তিনও তাঁর আত্মকথায় লিখেছেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন আমি নারীবাদী কিনা বা এই নারীবাদ দ্বারা কতটা প্রভাবিত। বলে রাখি, আমি কিন্তু কোনো ইজম-এ বিশ্বাসী নই। আমি নিজে একজন নারী, তাই সমাজে তাদের অবস্থান, দুঃখ-যন্ত্রণাটা চোখে পড়ে বেশি। পুরুষরাও মেয়েদের কথাই লেখে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্থান দেয় না। সামাজিক পরিসরেও নিষ্পেষিত তারা। ধারা থাকলেও তার সুযোগ নেয় একদল মতলবী মহিলা। যাদের সত্যিই প্রয়োজন, তারা লজ্জা কাটিয়ে উঠে আসতে পারে না আদৌ। একটা কথা বিশ্বাস করি, ইজম বা বাদ-এ বদ্ধ হলে স্বাধীনতা নষ্ট হয়। লেখকের সৃষ্টি ক্ষমতা কিন্তু আর থাকে না।

বিশ্বায়নের এই যুগ কিন্তু বাজার-সর্বস্ব। বড় পাবলিশিং হাউসগুলো মনে করে, পাঠক যেমন চায়, লেখককেও তেমনই লিখতে হয়। বাজারের চাহিদা গ্রাস করেছে লেখককেও। গলা টিপে ধরা হয়েছে সাহিত্যের।

এসএমএস, নেট, চ্যাটিং, ডেটিং এই হালফ্যাশনের আধুনিকতাকে বিষয় করেই তাই এগোতে হচ্ছে সাহিত্যকেও।নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী, গভীরতা, দর্শন-এসবের স্থান কমে যাচ্ছে। এভাবে সাহিত্য হয় না। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মাচরণের যে বৈচিত্র্য, তাই হারিয়ে যাচ্ছে।

এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের দায় কিছুটা সাহিত্যকেও নিতে হচ্ছে। আর তাই আজ তার গতিপথ রুদ্ধ। যাপনের একঘেঁয়েমি গ্রাস করেছে সাহিত্যকে…।’

তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম জন্মভূমি মাতৃভূমি,মৈত্রেয় জাতক,অন্তর্ঘাত,কিনার থেকে কিনারে,উত্তরসাধক,পঞ্চম পুরুষ,বৃত্তের বাইরে,রাধানগর,কাক জ্যোৎস্না,একুশে পা,অশ্বযোনি,ফেরো মন,অষ্টম গর্ভ ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।

অসংখ্য পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে
তারাশঙ্কর পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ইত্যাদি।

লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে প্রিয় এই লেখিকার জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখ:- ১১/০৩/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments