শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মবার্ষিকী আজ

বাঙালির গৌরবের ষাটের দশকে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন শুরু হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে পাঠবিমুখ সমাজে আলো ও আশা জাগানোর নিরন্তর প্রয়াসের এক ক্লান্তিহীন স্বপ্ন অভিযাত্রী যোদ্ধা তিনি।

বলছি একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথা। তিনি বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক। তিরিশ বছরের বর্ণাঢ্য অধ্যাপনা জীবন তার।

তিনি ষাটের দশকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে পরিচিতি পান। সে সময়ে সমালোচক এবং সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি অবদান রেখেছিলেন।

তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, যা চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দুইহাজার চার সালে তিনি রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দুইহাজার পাঁচ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি দুইহাজার বারো সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। উনিশশো সত্তর এর দশকে তিনি টিভি উপস্থাপক হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উনিশশো উনচল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ পঁচিশে জুলাই কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার অন্তর্গত কামারগাতি গ্রামে।

উনিশশো পঞ্চান্ন সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, উনিশশো সাতান্ন সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি উনিশশো ষাট সালে স্নাতক ও উনিশশো একষট্টি সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন

উনিশশো বাষট্টি সালের পহেলা এপ্রিল তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিজীবন শুরু করেন।

সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন বর্তমানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজে। এই কলেজে তিনি দু’ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র তেইশ।

এরপর তিনি ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। আবু সায়ীদ যখন ঢাকা কলেজে যোগ দেন তখন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও গদ্য লেখক শওকত ওসমান৷

ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তাঁর নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশে টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করেন।

আবু সায়ীদ উনিশশো আটাত্তর সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র উনিশশো আটানব্বই সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়।

উনিশশো ষাট এর দশকে আবু সায়ীদ বেশ কিছু প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা লিখেছেন। তাছাড়া ওনার বক্তব্যসংবলিত গ্রন্থ ব্রাহ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া অতি বিখ্যাত। এছাড়াও তার রচিত ‘সংগঠন ও বাঙালি’ বইটিও বেশ জনপ্রিয়।

একুশে পদক ছাড়াও আব্দুল্লাহ আবু সাইদ অর্জন করেন রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, প্রবন্ধে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার,বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন থেকে পালমোকন ১৭ সম্মাননা প্রভৃতি।

আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।

তারিখঃ-২৫/৭/২০২১ ইং।

Facebook Comments