লেখক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। সাংবাদিক হিসেবে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুরের ছওগাঁও এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন উনিশশো চার সালের তেসরা জুলাই। পিতার নাম কুলদানন্দ মুখোপাধ্যায়, মাতা মনোমোহন দেবী।

উনিশশো তেইশ সালে বাংলা ও সংস্কৃতে লেটার নম্বর সহ ম্যাট্রিক পাশ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতায় ভর্তি হন, অর্থাভাবে পড়া ছাড়তে হয় তাঁকে।

তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় উনিশশো পঁচিশ সালে সাংবাদিক হিসেবে। ওই সময় কবিতা লেখার সূত্রে তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন।

তিনি “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।অর্থসঙ্কটে ভুগতে থাকা ঐতিহ্যবাহী এই পত্রিকাকে পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। দৈনিক বসুমতী, সত্যযুগ, ভারতকথা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

একইভাবে অর্থাভাবে ক্লিষ্ট বসুমতীর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করে পত্রিকাটিকে সচল করেন। তাঁর কৃতিত্বে ক্রমে অসাধারণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই পত্রিকা। সাংবাদিকতা ছাড়া যুদ্ধ সংক্রান্ত লেখালিখিতে খ্যাতিলাভ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর নানা লেখা প্রকাশিত হয় যেখানে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া ও সামরিক সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। যুগান্তরসহ বিভিন্ন কাগজে মুক্তিযুদ্ধের বিবরন লিখেছিলেন যা তখন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে সেখানে যান বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। তিনি ভারত-সোভিয়েত সুহৃদ সংঘের সভাপতি ছিলেন। বিশ্ব শান্তি সংসদের সাথে যুক্ত ছিলেন যুদ্ধবিরোধী সাংবাদিক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। আণবিক পরীক্ষার বিরোধীতায় তিনি সম্পাদকীয় লেখেন তেজস্ক্রিয় পুঁইশাক।

বিশ্ব পরিস্থিতির প্রামাণ্য বিশ্লেষণ থেকে স্বদেশ ও জাতির জীবনে সর্ববিধ সংকটে তাঁর নির্ভীক সুচিন্তিত আবেগময় আলোচনা ও তীক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি পাঠক সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। অন্তিম পর্যায়ে তিনি ‘দৈনিক সত্যযুগ’ ও ‘ভারতকথা’ নামে দুটি নবীন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন । তাঁর বাগ্মিতা ছিল লেখনীর মতোই প্রসিদ্ধ ও জনচিত্তজয়ী।

বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় সমরভাষ্য ও রাষ্ট্রীয় আলোচনার সূত্রপাত করেন। চারটি গবেষণাশ্রিত গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলি হল –

রুশ জার্মান সংগ্রাম, জাপানি যুদ্ধের ডায়রী, পশ্চিম এশিয়ার বন্ধন মুক্তি,রুশ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি।

কয়েক দশক ধরে তাঁর একাগ্র সাধনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তাঁর আন্তর্জাতিক ফলাফল যার পরিণতি মহাগ্রন্থ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস ভারতীয় ভাষায় অনন্য কীর্তি।

বিভিন্ন সময় তিনি নানা দেশ বিদেশের পুরস্কার পান। ভারত সরকার তাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণে’ সম্মানিত করেন ১৯৭০ সালে।১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পান সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার।

উনিশশো তিরানব্বই সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বিশে মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখ:- ২০/৩/২০২১ ইংরেজি

Facebook Comments