রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী আজ

আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্ৰত্তর যুগে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ । রূপময় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন।তার রচিত “বনলতা সেন” আধুনিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ।

জীবনানন্দ দাশ আঠারোশো নিরানব্বই সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ সতেরোই ফেব্রুয়ারী বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ ও মাতার নাম কুসুমকুমারী । তার মা সেই যুগে “ বিন্দু কবিতা রচনা করে কবি খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

তার মায়ের বিখ্যাত একটি কবিতা হল—

“ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”

জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক । পরে একে একে প্রকাশিত হয় ধূসর পান্ডুলিপি , সাতটি তারার তিমির , রূপসী বাংলা , মহাপৃথিবী , বেলা অবেলা কাল বেলা প্রভৃতি।

তার কাব্যের ইতিহাস চেতনা , নিঃসঙ্গ বিষন্নতা এবং অবশ্যই বিপন্ন মানবতার ব্যথা তার স্বকীয় বিশিষ্টতা নিয়ে স্থান লাভ করেছিলেন ।

তার প্রবন্ধ গ্রন্থ কবিতার কথা , জীবনানন্দ দাশের গল্প উপন্যাস ‘ মাল্যবান ও সতীর্থ তার সাহিত্যধারার উল্লেখযােগ্য সংযোজন ।

জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য রচনার জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । ববাহোত্তরকালের একবিশিষ্টকবি ছিলেন জীবনানন্দ দাশ । বাংলা কাব্য সাহিত্যে তার প্রভাব সর্বাধিক ।

বাংলা সাহিত্যে তার প্রথম আবির্ভাবের সময় বহু বিতর্কিত কবি ছিলেন । কারণ তার সব কবিতার উপমা, চিত্রকলা এতই প্রথাবিরােধী ছিলাে যে তা রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যের ঐতিহ্যের পথে ছিলাে এক বিরাট ব্যাতিক্রম ।

জীবনানন্দের কবিতায় মনন অপেক্ষা আবেগের প্রাধান্য বেশী থাকলেও তার কবিতায় ইতিহাস ভূগােল সমন্বিত এক বুদ্ধিদীপ্ত চেতনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ।

তার কাব্যের বিষয়বস্তুহল প্রকৃতি ও প্রেম। এই কাব্যকলার অসাধারণ তত্ত্বই তাঁকে বৈচিত্র্য ও গভীরতা দান করেছে। এছাড়াও তার বিভিন্ন গ্রন্থে শিল্পীশৈলী ও বর্ণাঢ্য চিত্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি ও প্রেমের নানা দিক উদ্ঘাটিত হয়েছে ।

আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশ এক স্বতন্ত্র কবি। তাঁর কাব্যকলার ক্ষেত্রে এই স্বাতন্ত্রতার জন্যই বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অনন্য। তিনি ছিলেন এক রােমান্টিক কবি ।

বাল্যবয়স থেকেই রূপময় প্রকৃতির প্রতি তার কবিমন আকৃষ্ট হয়েছিল। ভােরের নির্মল, আকাশ , শিশির ভেজা ঘাস, ধানের ক্ষেতে উদ্দাম হাওয়ার মাতন, নদীর চরের চিল, ডাকা বিষন্ন দুপুর, জলে ভাসা নৌকোর তময় গলুই, সবকিছু প্রকৃতির সব বর্ণ বৈচিত্র্য জীবনানন্দের কাছে এক অজানা সুদূরের হাতছানি হয়ে ধরা দিত ।

এই রূপমুগ্ধ কবির কণ্ঠে তাই আমরা শুনতে পেয়েছিলাম –

“ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি , তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর । ”

আঠারোশো চুয়ান্ন সালের বাইশে অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৭/২/২০২১ ইং।

Facebook Comments