ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন মুহম্মদ খসরু। তাঁর নামটিই যেন একটি প্রতিষ্ঠান। সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা এই ব্যক্তিত্ব ২০১৯ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি ছেড়ে গেছেন সবাইকে।
সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাড়াও বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’ ও ‘চলচ্চিত্র’ এর সম্পাদক মুহম্মদ খসরু। এছাড়া বেশ কয়েকটি গ্রন্থের প্রণেতাও তিনি।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা রাজেন তরফদারের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘পালঙ্ক’-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন সত্তর এর দশকে। যা ধ্রুপদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে এই সাক্ষাৎকারটি উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রণ হয়েছে।
মুহম্মদ খসরু ভারতের হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের মোহনপুর গ্রামে।
পটুয়া কামরুল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) নকশা কেন্দ্র চালু হলে সেখানে আলোকচিত্রী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন মুহম্মদ খসরু। ফটোগ্রাফি, সিনেমা আর বইয়ের নেশায় তাঁর আর সংসার করা হয়নি।
তিনি দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুহম্মদ খসরু চলচ্চিত্র বিষয়ক কালজয়ী পত্রিকা ধ্রুপদীর সম্পাদক হিসেবে চলচ্চিত্র মহলে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই পথিকৃত গত প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।
তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফিল্ম স্টাডি সেন্টার। কেরালার চিত্রলেখা ও ওডেসা ফিল্ম কো-অপারেটিভের অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে যে ফিল্ম কো-অপারেটিভ গঠিত হয়েছিল, তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ শুরু হয়, সেখানেও মুহম্মদ খসরুর অবদান অনবদ্য।
চলচ্চিত্র নিয়ে পত্র-পত্রিকায় গুরুগম্ভীর লেখালেখি ও গবেষণার ধারাবাহিকতা শুরু হয় উনিশশো আটষট্টি সালে। পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি থেকে মুহম্মদ খসরুর সম্পাদিত চলচ্চিত্রের কাগজ “ধ্রুপদী” যখন প্রকাশিত হতো, সেই সময়ে চলচ্চিত্রের পত্রিকা সম্পাদনা কিংবা প্রকাশ ছিল প্রায় অসম্ভব কাজ।
তখন থেকে আজ পর্যন্ত “ধ্রুপদী” দুই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের কাগজের স্বীকৃতি পায়।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই প্রবাদতুল্য মানুষটি উৎসাহিত করেছেন দেশের খ্যাতনামা অনেক চলচ্চিত্রকারদের। তারেক মাসুদ তাঁদের অন্যতম। চলচ্চিত্রকে মানুষের অধিকারের পক্ষে কাজে লাগাতে লেখালেখি করেছেন তিনি। তাঁর বইগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন, বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ভূমিকা, সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আজীবন সম্মাননা।
সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ভাষায়, বাংলাদেশে যে তরুণেরা কখনও শিল্পের প্রেমে চলচ্চিত্র চর্চায় বা নির্মাণে যুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুহম্মদ খসরুর সঙ্গে পরিচিত নন।
লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে গুণী এই চলচ্চিত্র যোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি অজস্র ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
তারিখ:- ১৯/০২/২০২১ ইংরেজি