দীনেশচন্দ্র সেন ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোক-সাহিত্যবিশারদ এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার।
তিনি আঠারোশো ছেষট্টি সালের তেসরা নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি ও সাংবাদিক সমর সেন তার পৌত্র।
আঠারোশো বিরাশি সালে দীনেশচন্দ্র সেন জগন্নাথ স্কুল থেকে এনট্রান্স এবং ঢাকা কলেজ থেকে এফ.এ আঠারোশো পঁচাশি সালে পাস করেন। আঠারোশো উননব্বই সালে তিনি বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
পরের বছর আঠারোশো নব্বই সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন কালে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন।
সেসব উপকরণের সাহায্যে আঠারোশো ছিয়ানব্বই সালে”বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” শিরোনামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেন।
উনিশশো এগারো সালে তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ “হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি লিটেরেচার” প্রকাশিত হলে তা সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। উনিশশো তেরো সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলোসিপ” প্রদান করে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা সম্পাদনা করেন।
উনিশশো একুশ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট ডিগ্রী এবং উনিশশো একত্রিশ সালে “জগত্তারিণী স্বর্ণপদক” প্রদান করেন। উনিশশো একুশ সালেই ব্রিটিশ শাসিত ভারত সরকার তাকে “রায় বাহাদুর” উপাধিতে ভূষিত করেন।
উনিশশো ছাব্বিশ সালে মৈমনসিংহ গীতিকা গ্রন্থটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন রচিত গবেষণাধর্মী “বৃহৎবঙ্গ” গ্রন্থটি বাঙালীর ইতিহাস চর্চায় অনন্য!
তার রচিত অনন্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, তিন বন্ধু, রামায়ণী কথা, বেহুলা, সতী, ফুল্লরা, জড় ভরত, সুকথা, গৃহশ্রী, নীলমানিক, মুক্তা চুরি, সরল বাংলা সাহিত্য, বৈদিক ভারত, ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য, আলোকে আঁধারে, চৌকির বিড়ম্বনা, ওপারের আলো, পৌরাণিকী, বৃহৎ বঙ্গ, আশুতোষ স্মৃতি কথা, শ্যামল ও কাজল, পদাবলী মাধুর্য্য, পুরাতনী, বাংলার পুরনারী, প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান, হিন্দু সমাজ ও বৈষ্ণব ধর্ম, মৈমনসিংহ গীতিকা প্রভৃতি।
উনিশশো উনচল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বিশে নভেম্বর কলকাতার বেহালায় তার মৃত্যু হয়।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২০/১১/২০২১ ইং।