বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

আঠারোশো আটানব্বই খ্রিষ্টাব্দের তেইশে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তার লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ।

সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা।

তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে পঁয়ষট্টিটি উপন্যাস, তেপান্নটি গল্পগ্রন্থ, বারোটি নাটক, চারটি প্রবন্ধের বই, চারটি আত্মজীবনী, দুইটি ভ্রমণ কাহিনী, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রহসন।

এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার,পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।

তারাশঙ্করের উপন্যাস, গল্প ও নাটক নিয়ে চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ও তারাশঙ্করের জলসাঘর এবং অভিযান উপন্যাসের সফল চিত্ররূপ দিয়েছেন।

তার যেসব রচনা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরোগ্য নিকেতন, এটি ছিলো জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র এছাড়াও জলসাঘর অভিযান, অগ্রদানী, আগুন, উত্তরায়ণ, কবি, কান্না, কালিন্দী, গণদেবতা, চাঁপাডাঙার বউ, জয়া, ডাকহরকরা, দুই পুরুষ,ধাত্রীদেবতা, না, ফরিয়াদ, বিচারক, বিপাশা, মঞ্জরী অপেরা, রাইকমল, শুকসারী হারানো সুর গল্প অবলম্বনে নির্মিত, সন্দীপন পাঠশালা, সপ্তপদী, হার মানা হার মহাশ্বেতা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত, হাঁসুলীবাঁকের উপকথা এবং বেদেনী।

উনিশশো পঞ্চান্ন খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে “রবীন্দ্র পুরস্কার” লাভ করেন। উনিশশো ছাপান্ন খ্রিষ্টাব্দে “সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার” পান। উনিশশো সাতান্ন খ্রিষ্টাব্দে তিনি চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন ভ্রমণে যান।

এর পরের বছর তিনি অ্যাফ্রো এশিয়ান লেখক সঙ্ঘের কমিটি গঠনের প্রস্ততিমূলক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গমণ করেন। এর পর তিনি তাসখন্দে অনুষ্ঠিত অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

উনিশশো বাষট্টি খ্রিষ্টাব্দে তারাশঙ্কর ভারত সরকারের পদ্মশ্রী ও উনিশশো আটষট্টি খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।

উনিশশো একাত্তর সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ চৌদ্দই সেপ্টেম্বর কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ১৪/৯/২০২১ ইং।

Facebook Comments