বিশিষ্ট বাঙালি অধ্যাপক, সমালোচক ও প্রাবন্ধিক ক্ষেত্র গুপ্তের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ক্ষেত্র গুপ্ত ছিলেন একজন বাঙালি অধ্যাপক, সমালোচক ও প্রাবন্ধিক।

বাংলাদেশের বরিশালের পিরোজপুরে অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্ত উনিশশো ত্রিশ সালের সতেরোই জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

পিরোজপুর সরকারি বিদ্যালয় থেকে ডিভিশন্যাল বৃত্তি পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। দেশভাগের পর তাঁর পিতার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে এসে বারাসতে বসবাস শুরু করেন।

উনিশশো তিপান্ন খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। প্রায় সব কটি পত্রেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ছয়টি স্বর্ণ পদক ও একটি রৌপ্যপদক লাভ করেন।

‘মধুসূদনের কবি-আত্মা ঔ কাব্যশিল্প’ শীর্ষক প্রবন্ধ রচনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি পান। উনিশশো ছিয়াত্তর খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস: শিল্পরীতি’ গ্রন্থে র জন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি পান।

উনিশশো পঁয়ষট্টি খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে লেকচারার পরে রিডার এবং বিদ্যাসাগর অধ্যাপক হিসাবে বাংলা বিভাগের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন।

কিছুদিন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছেন এবং এভাবে উনিশশো পঁচানব্বই খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন।

অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্ত মূলত ছিলেন অন্যতম সাহিত্য সমালোচক। সম্পূর্ণ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, তারাশঙ্কর, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্যিকের রচনাসমূহের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে যে বিশ্লেষণ করেছেন তাতে বাংলা সাহিত্য সমালোচনায় এক নতুন ধারা প্রবর্তিত হয়ছে।

তাঁর রচিত বহু গ্রন্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের সহায়ক গ্রন্থ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর এরূপ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে সমালোচনা, বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস, প্রাচীন কাব্য-সৌন্দর্য জিজ্ঞাসা ও নবমূল্যায়ন, মধুসূদনের কবি-আত্মা ও কাব্যশিল্প, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস: শিল্পরীতি, রবীন্দ্র-গল্প : অন্য রবীন্দ্রনাথ, সংযোগের সন্ধান লোকসংস্কৃতি, বাংলাদেশ : সংস্কৃতি ও সাহিত্য, কবি মুকুন্দরাম প্রভৃতি।

সাহিত্যকীর্তির জন্য তাঁর প্রাপ্ত বহু পুরস্কারের উল্লেখযোগ্য এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে ‘সুকুমার সেন স্বর্ণপদক’, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’, বাংলাদেশের ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল স্মারক পুরস্কার’, রেনেসাঁস একাডেমির ‘মধুসূদন পুরস্কার’ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আশুতোষ ভট্টাচার্য লোকসাহিত্য পুরস্কার’ প্রভৃতি।

অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্ত দুইহাজার দশ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ চব্বিশে সেপ্টেম্বর আশি বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য, দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ২৪/৯/২০২১ ইং।

Facebook Comments