বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। আঠারোশো সাতান্ন সালে প্রকাশিত তার ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস। তার ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর।
তিনি আঠারোশো চৌদ্দ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ বাইশে জুলাই কলকাতায় এক বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
প্যারীচাঁদ মিত্র বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। শৈশবে একজন গুরুমহাশয়ের নিকট বাংলা, পরে একজন মুন্সির নিকট ফারসি শিখেন।
ইংরেজি লাভের জন্য হিন্দু কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন। ঐ সময় ডিরোজিও নামে একজন বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন হিন্দু কলেজে। তিনি তার শিষ্য ও ভাবশিষ্য ছিলেন।
তিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। তিনি ফার্সি, বাংলা ও ইংরেজি ভালো জানতেন। বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
তিনি মহিলাদের জন্য একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার সহযোগী ছিলো রাধানাথ শিকদার।
তিনি এছাড়াও জনকল্যাণ মূলক কাজও করতেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি পশু-ক্লেশ নিবারণী সভারও সদস্য ছিলেন। বেথুন সোসাইটি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। আঠারোশো আটত্রিশ সালে জ্ঞানান্বেষণ সভার সদস্য হন তিনি।
তার ইংরেজি ভাষায় রচিত লেখাসমূহ ছাপা হত ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, ক্যালকাটা রিভিউ, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি পত্রিকায়।
তিনি পুলিশি অত্যাচারিতার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন এবং সফলকামও হয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী শিক্ষা প্রচারে যথেষ্ট সক্রিয়তার পরিচয় দেন। তিনি বিধবাবিবাহ সমর্থন করতেন। তিনি বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের বিরোধিতা করেন। তিনি আমদানি ও রপ্তানি এবং চালের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থোপার্জন করেন।
আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাসটি তার শ্রেষ্ঠ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসটির অন্যতম প্রধান চরিত্র ঠকচাচা। উল্লেখ্য যে এখানে তিনি যে কথ্য ভাষা ব্যবহার করেছিলেন তা আলালী ভাষা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই গ্রন্থটি ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয়েছিল The spoiled child নামে।
তার রচিত অভেদী,আধ্যাত্মিকা, The Zemindar and Ryots এই গ্রন্থগুলি তখনকার সময়ে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। কারণ এটি রচিত হয়েছিলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে যৎকিঞ্চিৎ, রামারঞ্জিকা, বামাতোষিণী, গীতাঙ্কুর প্রভৃতি।
আঠারোশো তিরাশি সালের তেইশে নভেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২২/৭/২০২১ইং।