প্রথা বিরোধী লেখক হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত তিনি। ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনীতিক ভাষ্যকার।
গতানুগতিক চিন্তাধারা তিনি সচেতন ভাবে পরিহার করতেন। তাঁর নারী, দ্বিতীয় লিঙ্গ এবং পাক সার জমিন সাদ বাদ গ্রন্থ তিনটি বিতর্কের ঝড় তোলে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সকলেই বুঝতে পারছেন কার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে কথাগুলো। ঠিক তাই, তিনি সকলের অতি পরিচিত অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সত্তরটির বেশি। এর মধ্যে রয়েছে দশটি কাব্যগ্রন্থ, তেরোটি উপন্যাস, বাইশটি সমালোচনা গ্রন্থ, আটটি কিশোরসাহিত্য, সাতটি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ যা তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়।
তাঁকে উনিশশো ছিয়াশি সালে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং দুইহাজার বারো সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
আজাদ উনিশশো সাতচল্লিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ আঠাশে এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে তাঁর দাদুর বাড়ি কামারগাঁওয়ে জন্ম নেন।
তাঁর নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। পরে আঠারোশো অষ্টাশি সালের আঠাশে সেপ্টেম্বর নাম পালটে তিনি হুমায়ুন আজাদ হন।
হুমায়ুন আজাদ পেশায় শিক্ষক ছিলেন। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রভাষক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে বৃত ছিলেন।
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিক। তাঁর অন্যতম প্রণোদনা ছিল প্রথা-বিরোধিতা। কবিতা, উপন্যাস ও রচনা সর্বত্রই তিনি প্রথাবিরোধী ও সমালোচনামুখর।
তিনি উনিশশো একানব্বই সালে প্রকাশিত ‘প্রবচনগুচ্ছ’ এ দেশের শিক্ষিত পাঠক সমাজকে আলোড়িত করতে সক্ষম হয়েছিল।
একটি বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাঁর স্বপ্ন ছিল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকেই তিনি মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার পক্ষে অনুকূল বলে মনে করতেন।
গদ্যের জন্য বেশি জনপ্রিয় হলেও হুমায়ুন আজাদ আমৃত্যু কাব্যচর্চা করে গেছেন।
উনিশশো বিরানব্বই খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধের বই ‘নারী’।
তবে প্রচন্ড বিরোধিতার ফলে উনিশশো পঁচানব্বই সালে ‘নারী’ বইটি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার। অবশ্য চার বছর পর দুইহাজার খ্রিস্টাব্দে বইটি আবার পুনর্মুদ্রিত হয়।
তাঁর ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ গ্রন্থে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের দূরবস্থার সাহসী বর্ণনা আছে।
দুইহাজার চার খ্রিস্টাব্দের সাতাশে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণে মারাত্মক জখম হন তিনি।
কিন্তু এর পর আর বেশি দিন বাঁচেননি তিনি। সাতই আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
একই বছর বারোই আগস্ট নিজের ফ্ল্যাটে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আজ তার জন্মবার্ষিকী। লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখঃ- ২৮/৪/২০২১ ইং।