প্রতিভাময়ী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছায়া দেবীর জন্মবার্ষিকী আজ

ছায়া দেবী ছিলেন একজন প্রতিভাময়ী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। প্রায় দুশোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র আপনজন। যে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি অর্জন করেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। আলাপ চলচ্চিত্রে তিনি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করেন।

উনিশশো উনিশ সালের আজকের এই দিনটিতে অর্থাৎ তেসরা জুন ছায়া দেবী ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। দিল্লিতে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হবার সময় থেকেই তিনি নিয়মিতভাবে সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন ।

এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না । দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন ।

সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।

দক্ষতার জোরেই রুপোলি পর্দায় সুযোগ পান কনক। বাড়ি থেকে বাধা দেয়নি কেউ। ‘পথের শেষে’ ছবিতে ছায়াকে দেখে মুগ্ধ হলেন খ্যাতনামা পরিচালক দেবকী কুমার বসু। পরপর তাঁর দুটি ছবিতে মুখ্য চরিত্রে সাইন করালেন ছায়াকে।

বিদ্যাপতি এবং সোনার সংসার। দেবকী বসুকে শিক্ষক রূপে পেয়ে ছায়া দেবী অভিনয় ক্ষমতার সেরা পাঠ পেয়ে গেলেন। সোনার সংসার ছবিতে রমার চরিত্র। বিদ্যাপতি তে রানি লক্ষ্মীর চরিত্রে সমগ্র ভারতকে বশ করলেন ছায়া দেবী। তাঁর পারিশ্রমিক এক লাফে পাহাড়ে।

এর পর অহীন্দ্র চৌধুরী-ছায়া দেবী অভিনীত সুশীল মজুমদারের যুগান্তকারী ছবি রিক্তা বড় হিট করল। এই ছবিতে অহীন্দ্রের স্ত্রী করুণার ভূমিকায় অভিনয় করেন ছায়া। রিক্তাতে ছায়া দেবী প্লেব্যাক গানও করেন। গানও হিট হয় এ ছবির।

এরপর উত্তম-সুচিত্রা যুগ। যে যুগ থেকে ছায়াছবির আইকনিক মা হয়ে ওঠেন ছায়া দেবী।

উনিশশো ছত্রিশ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে পথের শেষে ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

উনিশশো ছত্রিশ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর সোনার সংসার ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।

এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।

উনিশশো উনচল্লিশ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা),জীবন মরণ, রিক্তা প্রভৃতি ।

অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন । উনিশশো খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি অভয়ের বিয়ে ছবিতে তিনি পাঁচটি গান গেয়েছেন।

প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই যান। সেখানে মেরাগাঁও ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান।

ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হিন্দী তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

উনিশশো সাঁইত্রিশ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাপতি ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন।

যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ ।

বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই রত্নদীপ ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয়। প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন ।

ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন । তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সবচেয়ে চলচ্চিত্র আপনজন।

দুইহাজার এক সালের পঁচিশে এপ্রিল গুণী এই অভিনেত্রী মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তার জন্মবার্ষিকীতে লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।

তারিখঃ- ৩/৬/২০২১ ইং।

Facebook Comments