ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। ইতিহাস কথা বলে, বলে দেশ, জাতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা। যারা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। তারা হয়ত মরে গেছে। কিন্তু ইতিহাস তাদের স্থান দিয়ে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন বিখ্যাত একজন নাট্যকার, সাংবাদিক। বারোশো নিরানব্বই বঙ্গাব্দের চৌঠা শ্রাবণ; ইংরেজি আঠারোশো বিরানব্বই সালের জুলাই মাসে খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা সত্যচরণ সেনগুপ্তের কর্মস্থল রংপুরে তিনি শিক্ষালাভ করেন। সেখানে বিপ্লবী প্রফুল চাকী ছিলেন তাঁর সহপাঠী।
কর্মজীবনের শুরুতে শচীন্দ্রনাথ কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন, পরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু দৈনিক কৃষক ও ভারত পত্রিকায় সহ-সম্পাদকরূপে। এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক হিতবাদী, বিজলী, আত্মশক্তি প্রভৃতি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।
শচীন্দ্রনাথ বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন নাটক রচনায়। তাঁর রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকের মূল প্রতিপাদ্য দেশাত্মবোধ। তাঁর নাটকে ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী।
তাঁর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটক হচ্ছে: গৈরিক পতাকা, দেশের দাবি, রাষ্ট্রবিপ্লব, সিরাজ-উদ-দৌলা, ধাত্রীপান্না, সবার উপরে মানুষ সত্য, আর্তনাদ ও জয়নাদ।
তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সিরাজউদ্দৌলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রক্তকমল, ঝড়ের রাতে, নার্সিংহোম, স্বামী-স্ত্রী, জননী প্রভৃতি তাঁর সামাজিক নাটক। এসব নাটকে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের বিচিত্র জটিলতা ও সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও তাঁর রচিত কিশোরদের নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও অনুবাদ গ্রন্থ আছে। বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে তিনি রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চীন, সিংহল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।
উনিশশো একষট্টি সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ৫ই মার্চ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেন।
“লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন” এর সকল সদস্য দায়িত্বশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের পক্ষ থেকে প্রিয় এই নাট্যকার এবং সাহিত্যিক মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং অজস্র ভালোবাসা।
তারিখ:- ০৫/০৩/২০২১ ইংরেজি